বাংলাদেশে কি ডাইনোসর ছিল? বাংলাদেশে কি ডাইনোসরের ফসিল আবিষ্কারের সম্ভাবনা আছে? ভারতে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেলে বাংলাদেশে কেন যাবেনা?

বাংলাদেশে কি ডাইনোসর ছিল? বাংলাদেশে কি ডাইনোসরের ফসিল আবিষ্কারের সম্ভাবনা আছে? ভারতে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেলে বাংলাদেশে কেন যাবেনা?

 

প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা সোজা। না, ছিল না। কারণ, ডাইনোসর যখন ছিল,বাংলাদেশ নিজেই তখন ছিল না। তখনো এই ভূখন্ডের জন্মই হয় নি। মোটা দাগে পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরদের বিচরণকাল আজ থেকে ২৩ কোটি বছর পূর্ব থেকে সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্ব পর্যন্ত। অথচ বাংলাদেশ ভূখন্ডের বয়স কোটির ঘর অবধিও পৌঁছায় নি। কিন্তু ভারতে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেল যে? ঝাড়খণ্ডের পাহাড়েও তো পাওয়া গেছে, বেশি দূর তো না। তবে বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না কেন? 

 

এই যে আজকের ভারত উপমহাদেশ-ডাইনোসর আমলের ভারত কিন্তু এখানে ছিল না-ছিল দক্ষিণ গোলার্ধে! গোড়া থেকে শুরু করি। জটিল টার্ম এবং ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে যথাসম্ভব সহজ কথায় বর্ণনা করা হলো,সূক্ষ্ম ভুল ইগনোর করবেন। 

 

ডাইনোসর আমল : ২৩ কোটি থেকে সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে।  ২৭ কোটি বছর আগের কথা (ডাইনোসর আসতে বাকি ৪ কোটি বছর)। পৃথিবীতে তখন একমাত্র মহাদেশ-প্যাঞ্জিয়া, একমাত্র মহাসাগর-প্যান্থালাসা। ২০ কোটি বছর আগে প্যাঞ্জিয়া দুই ভাগে ভাঙলো-উত্তরে লরিশিয়া, দক্ষিণে গন্ডোয়ানা (লক্ষ্য করুন, ততদিনে ডাইনোসর আমল শুরু হয়ে গেছে)। দুই কোটি বছর যেতে না যেতে গন্ডোয়ানায়ও দুটো ভাগ, ফোকাস আনা যাক দক্ষিণ-পূর্ব ভাগটার উপর। কারণ : এন্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া আর মাদাগাস্কারের সাথে একসাথে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশটিও ছিল ঐ ভাগটারই অংশ!

 

জুরাসিক যুগ-ডাইনোসরদের স্বর্ণযুগ চলছে। ভারত দক্ষিণ-পূর্ব গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ, সেই সুবাদে ডাইনোসররা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতেও! ওদিকে টেকটোনিক প্লেটের ভাঙচুরও থেমে নেই। বন্ধনমুক্তির নেশায় মত্ত ভারত ৯ কোটি বছর আগে মাদাগাস্কারকে বিদায় জানিয়ে এশিয়ার দিকে রওয়ানা হলো স্বাধীন উপমহাদেশ হিসেবে। ডাইনোসর তখনো আছে। অবশেষে ৫ কোটি বছর আগে বিষুব রেখা পার হয়ে উত্তরে ইউরেশিয়ার প্লেটের সাথে মিশে। কিন্তু ততদিনে ডাইনোসরেরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। কাজেই গন্ডোয়ানার ভারত ডাইনোসরশূন্য হয়ে এশিয়ায় বয়ে এনেছে কেবলই ডাইনোসরের ফসিল-সেগুলোই এখন আবিষ্কৃত হচ্ছে।

 

এবার বাংলাদেশ। ভারত উপমহাদেশের বাদবাকি অংশের মতো বাংলাদেশও গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ ছিল-এটা বড়াই করে বলার সুযোগ নেই। কারণ বাংলাদেশ উপমহাদেশের আদি ভূভাগের কিনারে গড়ে ওঠা নবগঠিত একটা ডেল্টা-গাঙ্গেয় ডেল্টা (ব-দ্বীপ)। বাংলাদেশের উত্তরের খুব সামান্য অংশই অরিজিনাল গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ ছিল-তাও কি না সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে বেসিন হিসেবে, রাজাসরাস, বারাপাসরাসদের পা পড়েনি সেখানে। টারশিয়ারি যুগের পাহাড়, প্লাইস্টোসিন যুগের সোপান, পলিমাটিসমৃদ্ধ সমভূমি-সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে এসবই অনেক দেরিতে হয়েছে।

 

সহজ হিসাব-ভূখন্ড হয়েছে পলিমাটিতে, পলিমাটি বয়ে এনেছে নদী, নদীগুলোর মৌলিক উৎস হিমালয়, আর হিমালয়ের নিজের জন্মই ভারতীয় প্লেট এশিয়ার সাথে সংঘর্ষ করার পর, মানে ডাইনোসর বিলুপ্তির কয়েক কোটি বছর পর। বাংলাদেশ সে তুলনায় নবজাতক। কাজেই ঝাড়খণ্ডের রাজমহল পাহাড় থেকে দূরত্ব বেশি না হলেও জন্ম ইতিহাসের বিচারে ভারতের বাদবাকি অনেকটা অংশের থেকে বাংলাদেশের তফাৎ যোজন যোজন। তাছাড়া ডাইনোসরের ফসিল আবিষ্কারের উপযুক্ত স্থান যেরকম উঁচু, শুষ্ক ভূমি, তেমন বৈশিষ্ট্যের অঞ্চল বাংলাদেশে নেই।

 

অতএব,কাগজে-কলমে এদেশে ডাইনো-ফসিল আবিষ্কারের আশা নেই। পাওয়া গেলে (!) অনেক ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। অথচ প্রাগৈতিহাসিক গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ হওয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশটিতে বেশ কিছু ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে। তবে লক্ষাধিক বছরের পুরনো আদিম স্তন্যয়ায়ী, উদ্ভিদ ও জলজ জীবাশ্ম পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা এদেশে রয়েছে এবং পাওয়া গেছেও। হয়তো ভবিষ্যতে আরো অনেক জীবাশ্ম পাওয়া যায়।

মন্তব্য করুন »

একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।

 

লেখক সম্পর্কে »
জনপ্রিয় পোস্ট »
০৮, জুলাই, ২০১৯, ২:১০ অপরাহ্ণ - বিবিসি ফ্লাই
১৬, অক্টোবর, ২০১৯, ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ - মেসিলা ইয়াসমিন
২৫, জুলাই, ২০১৯, ৬:২৩ অপরাহ্ণ - লতিফা বেগম
২৭, নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ - ডাক্তার ফাহামিদা সাবিনা
সাম্প্রতিক লেখাসমূহ »
২২, আগস্ট, ২০২১, ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ - Aysha
১৪, আগস্ট, ২০২১, ৭:৫৮ অপরাহ্ণ - Aysha Biswas
২৩, জুলাই, ২০২১, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ - Akhi Akber
২৩, জুলাই, ২০২১, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ - Sidratul Momotha Rim