শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শরীরের ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায় ও তা ফাটতে থাকে। পায়ের পাতায় এর প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি। অনেকের আবার পা ফেটে রক্তও বেরতে থাকে। ফাটা পা যেমন দেখতে খারাপ লাগে তেমনই তা কষ্টদায়কও।
পা ফাটা রোধে ঘরোয়া সহজ উপায়
পায়ের পাতার উপর সারা শরীরের ভর পড়ে, পথে ঘাটে ধুলোর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে শরীরের এই অংশই। তাই এমনিতেই পায়ের পাতার জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু শরীরের নানা যত্ন নিলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে পায়ের পাতার দিকে খুব একটা নজর দিই না আমরা অনেকেই। তারই মাশুল গুনতে হয় শীতকাল এলে।
তবে যদি চান, তবে এই শীতেও আপনার পায়ের তলা থাকতে পারে নরম ও তেলা। খরচও খুব নামমাত্র। সহজলভ্য দু’-তিনটি উপাদানই এর জন্য যথেষ্ট। এই উপায়ে পায়ের যত্ন নিলে গোটা শীতকাল পা তো ফাটবেই না, বরং রুক্ষ ও ফেটে যাওয়া ত্বকের অংশও মোলায়েম হয়ে উঠবে। জানেন কী সেই উপায়?
একটি পাত্রে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল নিন। এতে মিশিয়ে নিন গরম গলানো মোম। এ বার মোম জমে যাওয়ার আগেই ঈষদুষ্ণ এই মিশ্রণ লাগিয়ে রাখুন পায়ের তলায়। তবে এর পর খুব বেশি হাঁটাচলা করবেন না, তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারলে ভাল হয়। সকালে উঠে পায়ে জমে যাওয়া মোম-তেলের মিশ্রণ ফেলে দিয়ে ধুয়ে নিন পা। শীতে প্রায় রোজই এই উপায়ে যত্ন নিতে পারেন পায়ের তলার। এতে পা ফাটা দূর হওয়ার সঙ্গে পায়ের তলা পরিষ্কার ও নরম থাকবে। আরও ভাল ফল পেতে সপ্তাহে দু’-তিন দিন এই মিশ্রণের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধুও মেশাতে পারেন।
পায়ের নিচে অনেক স্নায়ু থাকে। তাই এই উষ্ণ মিশ্রণ সেখানে মাখালে তার প্রভাবে শরীর গরম থাকে, ঘুমও ভাল হয়। এভাবেই সারা দিন পরিশ্রমের পর রাতে ঘুমনোর আগে মিনিট পাঁচেক সময় আর পকেটসই খরচেই এবার শীতে পায়ের তলাকে রাখুন আরামদায়ক ও মসৃণ।
যাদের পা ফাটার সমস্যা আছে, তারা সারাবছরই পায়ের যত্ন নিন। তাহলে শীতকালে অনেকটাই এড়াতে পারবেন এই সমস্যা।
যাদের কাজের প্রয়োজনে বেশি হাঁটাহাঁটি করতে হয়, বা যারা অনেকক্ষণ একটানা দাঁড়িয়ে থাকেন, তাদের পা ফাটার প্রবণতা বেশি হয়। শীতে যাদের গোড়ালি ফাটে, শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্য সময়ে হাল্কা হলেও ক্রিমের প্রলেপ দিতে হবে দু’ পায়ের পাতায়।
বাড়ি থেকে বার হলে পায়ে সবসময় উলের বা সুতির মোজা পরুন। সঙ্গে, পা ঢাকা জুতা। বাড়িতেও স্লিপারের সঙ্গে সুতির মোজা পরে থাকা ভাল। অনেকেই এখন সারা বছর পায়ে সুতির মোজা পরেন। এতে পা ভাল থাকে।
কষ্ট হলেও গরমে যদি বাড়ির বাইরে সুতির মোজা পরে থাকতে পারেন, তা হলে শীতকালে উপকার পাবেন। অনেকটাই কমবে পা ফাটার সমস্যা। জুতা-মোজায় যেমন পায়ের আর্দ্রতা বজায় থাকে, তেমনই অন্যদিকে, জীবাণু থেকেও রক্ষা পায় পা।
ব্যস্ততার মধ্যে একটি কাজ পায়ের জন্য নিয়মিত করুন। ঈষদুষ্ণ জলে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর ভাল করে পা মুছে ক্রিম লাগান। সব থেকে ভাল হয়, যদি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটা করতে পারেন। মোছার পরে শুকনো পায়ে ক্রিম লাগিয়ে সুতির মোজা পরে ঘুমিয়ে পড়ুন। নইলে, অন্য যে কোনও সময় এটা করতে পারেন। ধরুন, টিভি দেখতে দেখতে বা মোবাইলে চ্যাট করার সময় পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন হাল্কা উষ্ণ জলে। এতে সময় বাঁচল। আবার পায়ের যত্ন-আত্তিও হল।
প্রধানত শুষ্ক বাতাসে পায়ের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার জন্যই এর ত্বক ফাটতে শুরু করে। কিন্তু শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, আরও কিছু কারণে পা ফাটতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় পানি খাওয়া কম হলে বা দীর্ঘক্ষণ গরম পানিতে স্নান করলেও পা ফাটার প্রবণতা বাড়ে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, বা যারা পিউমিস স্টোন দিয়ে জোরে জোরে ঘষে পা পরিষ্কার করেন, তাদেরও পা ফাটার আশঙ্কা অনেক বেশি।
তাই, শুধু পার্লারে গিয়ে পেডিকিওরই নয়। বাড়িতেও ঘরোয়া উপায়ে পায়ের যত্ন নিন সারা বছর।
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।