বৃষ্টি অঝর শ্রোতে নামছে, শীক্ষার্থীরা কেউ বাড়ি যেতে পারছে না।সবাই ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করছে।কেউ বা গল্প করছে,কেউ বা আড্ডায় মেতে উঠেছে,আবার কেউ বা বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থীরবোধ করছে।
তেমনি অস্থীরতা বোধ করছে মেহিকা।তার বাড়িতে আজ তাকে বরপক্ষ দেখতে আসবে।মেহিকার সম্পুর্ন অমতেই বিয়েটা হচ্ছে।তার বাবা যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই হয়।তার বাবা বলছে ২:০০টার আগে যেতে।এখনতো ২:৫০ বেজে গেছে।এখন কি হবে।
বৃষ্টিতো থামছেই না, বরং তার আপন গতিতে চলছে।আরো দেরি হলে তো বাবা..........নাহ আর ভাবতে পারছি না। ভাবতে গেলেই ভয় লাগে।বাবা ত বুঝবেনা যে,বৃষ্টির কারনে যেতে পারছি না।
মেহিকার এ অস্থিরতা আর ভাবনা দুর থেকে তার ক্লাসমেট ফাহিম দেখছে।ফাহিম মেহিকার পাশে এসে বলে, ফাহিম কীরে মেহিকা,এমন করছিস কেন?আয় আমাদের সাথে আড্ডা দিবি।
মেহিকাঃ নারে আমার বাসায় যেতে হবে।
ফাহিমঃ পাগল!!!এত বৃষ্টির মধ্যে কীভাবে বাসায় যাবি? মেহিকাঃ জানি না রে,যে করেই হোক আমাকে বাড়ি যেতেই হবে।আচ্ছা তুই আমাকে হেল্প করতে পারবি?
ফাহিমঃ ওরে বাবা কী এমন কাজ যে তকে বাড়ি যেতেই হবে।অবশ্য তর বাবার কাজ হলে যেতে পারিস।অন্য কাউকে বল, আমি পারব না।তর বাবাকে দেখলেই আমার ভয় লাগে।
ফাহিম চলে গেলে আরো ভেঙে পরি।তখনি পেছন থেকে কেউ বলছে, ---কী রে তুই একা একা কী করছিস এখানে। (কন্ঠটা পরিচিত কিন্তু পিছনে না তাকিয়েই) ---কিছু না। ---মানে তুই আমাকে বলবি না। (পিছনে তাকিয়ে যেন আশার আলো খুজে পায়েছি)
মেহিকাঃ ও জয়।আমি ত ভাবছি......
জয়ঃ অন্য কেউ, right? মেহিকাঃ হুম।আচ্ছা দুস্ত একটা উপকার করে দে না। জয়ঃকি বল। আমাকে এক্ষুনি বাড়ি যেতে হবে।প্লিজ একটা ব্যবস্থা করে দেনা ভাই।আমি জানি তুই ছারা কেউ আমার কথা শুনবে না। জয়ঃok,এক্ষুনি যেতে হবে? মেহিকাঃ হ্যা, এক্ষুনি যেতে হবে।না পারলেও... জয়ঃok,তুই একটা কাজ কর।আমার সাথে আয়,এই ছাতাটা নিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়া।আমি অফিস থেকে একটা ছাতা নিয়ে আসি।
মেহিকাঃ আচ্ছা,তুই তারাতারি আয়।
জয় মেহিকাকে ওর বাড়ি পৌছে দিয়ে যায় কিন্তু বাড়ির ভেতরে যায় নি।ও জানে আজ মেহিকার বাবা ক্ষেপে আছে তাই আর বাড়ি যায় নি।মেহিকা আসতেই তার বাবা রাগি চোখে তাকায়,মেহিকা ভয়ে জিজ্ঞাসা করে,---
মেহিকাঃ বাবা,কী হয়েছে? তৎক্ষনাৎ তার বাবা বলে উঠে,এতক্ষন লাগে নাকি কলেজ থেকে আসতে? মেহিকাঃ বাবা বৃষ্টি...... বাবাঃআমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না।আমার মান-সম্মান কি তুমার ইচ্ছেই হবে না কি।
মেহিকাঃ বাবা আমি চে...... বাবাঃচুপ কর। তুমি আমার একমাএ মেয়ে বলে কিছু বলিনি।(বাবা চলে গেল।আর এদিকে মেহিকা সোফায় বসে কাদতে লাগল।তার মা তাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মেহিকা কাদতেই আছে।)
মাঃকাদিস না মা,জানিস তো তোর বাবার কত জেদ, রাগ।ছেলের বাড়ির মানুষ এসে তকে না পেয়ে চলে গেছে। তাই তোর উপর ক্ষেপে আছে।একটু পর তকে আবার আদর করবে। এ নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।খাবি।আমি গেলাম।
মেহিকার মা যাওয়ার পর ও ফ্রেস হয়ে এসে নিচে গিয়ে লাঞ্চ করে।রুমে এসে আরাম সে ঘুম দেই।কারন বাবা রাগ করুক আর যাই করুক বিয়ে টাতো ভেঙে গেছে।আর কোন চিন্তা নেই।
পরেরদিন......
আজ কলেজে যায়নি মেহিকা।তার বাবার উপর খুব জেদ লাগল।তার বাবা আজকে আবার একটা বিয়ে আনল।কি হয় এখন বিয়ে না দিলে।মনে হচ্ছে আমি অনেক বেশি খাই আর, 'আআআহহ......আস্তে লাগাও রিতা আপি।' মেহিকাকে সাজানো হচ্ছে খুব নরমাল ভাবে।কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।সে তার বাবাকে ১০১টা গালি দিচ্ছে।
মাঃহল রে রিতা।
রিতাঃহ্যা ফুপি,আরো আগেই হত। তুমার মেয়েটা যে কী।ওর নরাচরার জালা আমি কোনমতে সাজালাম। মাঃআচ্ছা যেমন হচ্ছে তেমনি হবে।তারাতারি চল।তর ফুপা আবার রেগে যাবে।আয় মা(মেহিকার হাত ধরে)এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে)
মেহিকাঃ লাগবে না তুমার হাত ধরা।কত করে বল্লাম তুমি বাবাকে বুঝিও কিন্তু..... বাবাঃ কি হচ্ছে এখানে।(হঠাৎ বাবা আসাতে ভাল মেয়ে সেজে গেছি)
মেহিকাঃ না মানে... মাঃআসলে আমি ওদের ডাকতে আসছি।তাই আর কি।
বাবাঃআচ্ছা তারাতারি আস।ওরা ত এতক্ষন ওয়েট করতে পারবে না।ছেলের জরুরি কাজ পরে গেছে।৫ মি: পর চলে যাবে।এস তুমরা।
বাবা চলে যাওয়ার পর ভাবছি,ইস,ছেলেটা যদি বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে যেত আমি পরের জন্মে ওকেই বিয়ে করতাম।
কিন্তু সেটা আর হল কই।ছেলে আমাকে দেখেই ৪৪০ বোল্টেজের শকড খেল মনে হচ্ছে।আমি দেখতে একটু বেশিই সুন্দর। অবশ্য কথাটা আমি না অন্যরা বলত।এরই মধ্যে তারা আমায় পছন্দ করে ফেলেছে।শুধু কি পছন্দ এঙ্গেজমেন্টও করে ফেলেছে।ছেলের বাবা মা বিয়ের তারিখও দিয়ে গেছে।সামনে ২ই আগষ্ট বিয়ে।কি যে করি।আজকে ৩০ই জুলাই মাএ ২দিন।তাও আবার বাড়ি থেকে বেরুনোও নিষেধ।কি করব এখন।বাবা যে কি।
এসব ভাবতে ভাবতে মেহিকা ঘুমিয়ে গেছে।পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে দরজায় কেউ যেন ধাক্কাচ্ছে।দরজা খুলে দেখি জয় এসেছে।
মেহিকাঃ কিরে জয় এত সকালে।কি মনে করে আয় ভেতরে আয়।
জয়ঃআচ্ছা তর মোবাইলটা কোথায় আগে বল।
মেহিকাঃ কেন এইতো। জয়ঃমোবাইলে দেখত কয়টা কল দিছি।
মেহিকাঃ আল্লা...হ,৩৬টা কল।কি এমন কাজ যে এতটা কল দিয়ে আবার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছিস। জয়ঃআচ্ছা তর কি কান্ডজ্ঞান বলে কিছু নেই নাকি।তর ত পরা সব কমপ্লিট তাই টেনশন নাই।আর আমি নির্ঘাত ফেল।
মেহিকাঃ ওহ হ্যারে তুর টেস্টপেপারগুলো ত আমার কাছে।আচ্ছা দাড়া আমি এনে দেই।আমার বোধ হয় আর লেখাপড়া হব না রে। জয়ঃকেন?
মেহিকাঃ আমার বিয়ে পরশু। জয়ঃকি বলছিস তুই।তর মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে। মেহিকাঃআমার নারে বাবার।হঠাৎ কি যে হল বাবার বুঝতেই পারছি না। জয়ঃকিন্তু সামনে ত পরীক্ষা। পরিক্ষার পর বিয়েটা হলে ভাল হত না।
মেহিকাঃ জানি না।আচ্ছা তুই যখন এসেছিস ভালই করেছিস।পরশু সবাইকে নিয়ে আসিস।আমার আবার বাড়ির বাইরে বেরুনোও বন্ধ। জয়ঃআচ্ছা আমি যাই।
জয় মন খারাপ করে চলে গেল।আপনারা ভাবছেন জয় কেন মন খারাপ করল।এর কারন আছে।কারনটা হল জয়ের বন্ধু রানাকে নিয়ে।রানা মেহিকাকে ভালবাসে।আর এই কথাটা রানা মেহিকাকে বলে নি কারন মেহিকা রাজি হবে না।রানা তাই মেহিকার বন্ধু জয়ের কাছেই বলে রাখল।
রানা ছেলেটা ভাল না।ওকে সবাই খারাপ ছেলেই ভাবে।ও দেখতে স্মার্ট ছেলে।
মেহিকার বিয়ের খবরটা পেলে রানা কি জয়কে মারবে নাকি রানা বিয়ে ভেঙে দিবে।কি করবে রানা এ প্রসঙ্গে পরবর্তী পর্বে দেখা হবে।
চলবে............
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।