ভাপা পিঠা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা যা প্রধানত শীত মৌসুমে প্রস্তুত ও খাওয়া হয়। এটি প্রধানত চালের গুড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরি করা হয়। মিষ্টি করার জন্য দেয়া হয় গুড়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শাঁস দেয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এটি একটি গ্রামীণ নাশতা হলেও বিংশ শতকের শেষভাগে প্রধানত শহরে আসা গ্রামীন মানুষদের খাদ্য হিসাবে এটি শহরে বহুল প্রচলিত হয়েছে। রাস্তাঘাটে এমনকি রেস্তোরাতে আজকাল ভাঁপা পিঠা পাওয়া যায়।
ভাপা পিঠা :
ভাপা পিঠা ( Vapa Pitha ) বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠার মধ্যে অন্যতম প্রধান। ভাপা পিঠা ছাড়া শীতকাল, এ যেন কল্পনাই করা যায়না! অসম্ভব সুস্বাদু এই পিঠা সাধারণত চালের গুড়া আর গুড় দিয়ে তৈরী করা হয়, সাথে চাইলে যোগ করা যায় নারিকেলও, স্বাদ বৃদ্ধির জন্য। সেই ছোটবেলা থেকেই আমরা সবাই দেখে এসেছি আমাদের মা, নানি, দাদিরা এই মজাদার ভাপা পিঠা বানাতে বসে যেতেন শীতের দিনগুলোতে। শীতের সকালে ভাপা পিঠার স্বাদ আস্বাদন করতে চান না এরকম বাঙ্গালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন রাস্তাঘাটেও ভাপা পিঠা পাওয়া যায়, আর শীতকাল মানেই শহর জুড়ে দেখা যায় ভাপা পিঠার আয়োজন, অনেক মানুষকে দেখা যায় ভাপা পিঠার স্বাদ নিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, পিঠা খাচ্ছেন।
ভাপা পিঠা বানানোর নিয়ম /রেসিপি
অসাধারণ মুখরোচক এই ভাপা পিঠা কিভাবে বানাতে পারবেন বাসায়? মজাদার এবং সুস্বাদু ভাপা পিঠার রেসিপি জেনে নিন
প্রাথমিক উপকরণঃ
চালের গুঁড়া ১ কেজি
নারিকেল ১ টা ( কোরানো )
গুঁড় কুচানো ( ২৫০ গ্রাম )
লবণ ( পরিমাণমত )
পানি ( পরিমাণমত )
অন্যান্য উপকরণঃ
২ টুকরা সাদা পাতলা নরম কাপড়ের টুকরা
ছোট্ট ঢাকনা
পিঠা বানানোর জন্য ছোট গোল বাটি
পিঠা ভাপানোর জন্য ঢাকনা সহ বিশেষ পাত্র অথবা ভাপা পিঠার মাটির হাড়ি
চালনি
প্রস্তুত প্রণালীঃ
১. একটি পাত্রে চালের গুঁড়া , লবণ ও অল্প অল্প পানি দিয়ে ঝরঝরে করে ভালো ভাবে মাখতে হবে যেন দলা পাকিয়ে না যায় , খেয়াল রাখবেন ঝরঝরে হতে হবে ।
২. এইবার এই চালের গুঁড়া চালনিতে হাত দিয়ে ঘষে ঘষে চালতে হবে । ঝরঝরে সুজির দানার মত বের হবে ।
৩. কোরানো নারিকেলের অর্ধেকটা চেলে নেয়া চালের গুঁড়ার সাথে মাখতে হবে ।
৪. এইবার হাঁড়ির অর্ধেকটা পানিতে ভরে জ্বাল দিয়ে পানি ফুটে ভাপ ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । ভাপা পিঠার জন্য বাজারে বিশেষ এক ধরনের হাড়ি পাওয়া যায় , সেটিও ব্যবাহার করতে পারেন । এই হাঁড়িটির ঢাকনার ঠিক মাঝখানে একটা ফুটো থাকে । হাড়ি কিনারায় বাতাস চলাচল আটকে দেয়া হয় তাই ভাপটা ফুটো দিয়েই বের হয় ।
৫. এখন পিঠার জন্য ছোট বাটিতে এক ফোটা তেল মেখে কিছু মাখানো চালের গুঁড়া দিয়ে তার উপর গুঁড় ছিটিয়ে দিতে হবে । এবং এর উপর আবার চালের গুঁড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । আলতো হাতে চেপে সমান করে ভাপা পিঠার আকার তৈরি করে নিতে হবে ।
৬. এবার বাটিটা ভেজা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে গরম পানির হাঁড়ির উপর উপুড় করে বসিয়ে দিতে হবে । এবার বাটিটা আস্তে করে সরিয়ে নিতে হবে । খেয়াল করতে হবে যেন পিঠা ভেঙ্গে না যায় ।
৭. কাপড়ের প্রান্ত গুলি মুড়ে এক জায়গায় করে বড় ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যেন ভাপটা পিঠার গায়ে লাগে । ৫/৭ মিনিট ভাপে সেদ্ধ হলে ঢাকনা সরিয়ে আঙ্গুল দিয়ে চেপে দেখতে হবে নরম হয়েছে কিনা । নরম হলে বুঝতে হবে পিঠা পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত ।
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।