জেনে নিন ইসলামে মায়ের প্রতি যে সম্মান প্রদান করা হয়েছে

ইসলাম মায়ের প্রতি যে সম্মান প্রদান করেছেন তা পৃথিবীর সকল সম্মানের ঊর্ধ্বে। পবিত্র কোরআনে কারিমে পিতা-মাতার সাথে সদাচার ও সদ্ব্যবহারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো এবং তাদের একজন অথবা উভয়েযদিতোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তাহলে তাদের সামনে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না।

জেনে নিন ইসলামে মায়ের প্রতি যে সম্মান প্রদান করা হয়েছে সে গুলো কী

বার্ধক্যে উপনীত হয়ে পিতা-মাতা সন্তানের সেবাযত্নের মুখাপেক্ষি হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবন সন্তানের দয়া ও করুণার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন যদি সন্তানের পক্ষ থেকে সামান্যতম বিরক্তি প্রকাশ পায়, তবে তাদের তা ক্ষত হয়ে দেখা দেয়। বার্ধক্যের কারণে মানুষের মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয়ে যায়। আবার বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে বুদ্ধি বিবেকও অকেজো হয়ে পড়ে, তখন পিতা-মাতার চাহিদা এবং দাবি-দাওয়াও এমন হয়ে যায়- যা পূর্ণ করা সন্তানের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়ে।

আল্লাহতায়ালা এ অবস্থায় পিতা-মাতার মনোতুষ্টি ও সুখ শান্তি বিধানের আদেশ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানকে তার শৈশবকাল স্মরণ করিয়ে বলেন, আজ পিতা-মাতা তোমার যতটুকু মুখাপেক্ষি এক সময় তুমিও তদাপেক্ষা বেশি তাদের মুখাপেক্ষি ছিলে। তখন তারা যেমন নিজেদের আরাম-আয়েশ ও কামনা-বাসনা তোমার জন্য ত্যাগ করেছিলেন এবং তোমার অবুঝ আবদার কথাবার্তাকে স্নেহ-মায়া-মমতা সহকারে মেনে নিয়েছিলেন, তেমনি মুখাপেক্ষিতার এই দুঃসময়ে বিবেক ও সৌজন্যবোধের চাহিদা এই যে, তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশের ছোট শব্দ ‘উহ’ও বলা যাবে না, পিতা-মাতার সামান্য কষ্ট হয় তা বলা নিষিদ্ধ।

এরপর বলা হয়েছে, পিতা-মাতার সঙ্গে এই সদ্ব্যবহার যেন নিছক লোক দেখানো না হয় বরং আন্তরিক মমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে হওয়া কর্তব্য। বস্তুত তোমরা তাদের জন্য এরুপ দোয়া কর- ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।

পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা :

হজরদ আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার সদ্ব্যবহারকারী সন্তান যখন ভালোবাসার দৃষ্টিতে পিতা-মাতার দিকে তাকায়, তখন আল্লাহ তার প্রতি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব লিখেন। সাহাবারা আরজ করল, যদি দিনে একশ’বার এভাবে দৃষ্টিপাত করে? নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ; একশ’বার দৃষ্টিপাত করলেও প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে এ সওয়াব পেতে থাকবে।

জেনে নিন ইসলামে মায়ের প্রতি যে সম্মান প্রদান করা হয়েছে সে গুলো কী

হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কি? তিনি বললেন, তারা উভয়ে তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। তাদের আনুগত্য ও সেবা-যত্ন জান্নাতে নিয়ে যায় এবং তাদের সঙ্গে বেয়াদবি ও তাদের অসন্তুষ্টি জাহান্নামে পৌঁছে দেয়।

পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া :

মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পুনঃপুনঃ বলতে লাগলেন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হোক অপদস্থ হোক। লোকেরা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! কার ওপর এমন বদদোয়া করছেন? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি পিতা-মাতা উভয়কে বা উভয়ের যে কোনো একজনকে বৃদ্ধবস্থায় পাওয়া সত্ত্বেও তাদের সেবা-যত্ন দ্বারা নিজের বেহেশতে গমন সুনিশ্চিত করে নিতে পারলা না।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবাদের লক্ষ্য করে বললেন, কবিরা গুণাহের মধ্যে অধিক বড় গুণাহ কোনটি- তা কি আমি তোমাদের বলব? সাহারা বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বললেন, তা হলো- আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ, তাদের অধিকার অনাদায় ও দুর্ব্যবহার করা।

জেনে নিন ইসলামে মায়ের প্রতি যে সম্মান প্রদান করা হয়েছে সে গুলো কী

হজরত আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা চাইলে যত গুনাহ এবং যেকোনো গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। তবে পিতা-মাতার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের নাফরমানি করলে তা তিনি কখনও ক্ষমা করবেন না, কেননা এর শাস্তি মুত্যুর পূর্বেই এ দুনিয়ায় শিগগির প্রদানের জন্য আল্লাহ তার আয়ু কমিয়ে দেন।

আর যখন কোনো বান্দা তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করে তখন আল্লাহ তার আয়ু বাড়িয়ে দেন, যাতে সে আরো সৎকাজ করে বেশি বেশি নেকি অর্জন করতে পারে।

পিতা-মাতা যাদের জীবিত আছে তাদের উচিত পিতা-মাতার প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া এবং তাদেরকে সবসময় খুশি রাখা। তাদের প্রতি কোনো সময় কোনো ধরনের খারাপ আচরণ না করা। পিতা-মাতা সন্তানের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য রহমতবিশেষ। যে সন্তান পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জন করতে ব্যর্থ হলো তার চেয়ে দুর্ভাগা এ ধরায় আর কে হতে পারে?

মন্তব্য করুন »

একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।

 

এই সম্পরকিত আরও »
০৫, ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ১:০৬ পূর্বাহ্ণ - বিবিসি ফ্লাই
৩০, ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ - M S Emon Ahmed Juktibadi
লেখক সম্পর্কে »

আপনি যদি বাংলা আর্টিকেল রাইটিং এ অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন তাহলে বিবিসি ফ্লাই ওয়েবসাইটে বাংলা ভাষাতে আর্টিক্যাল লেখার মাধ্যমে আয় করতে পারেন হাজার হাজার টাকা।

জনপ্রিয় পোস্ট »
০৮, জুলাই, ২০১৯, ২:১০ অপরাহ্ণ - বিবিসি ফ্লাই
১৬, অক্টোবর, ২০১৯, ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ - মেসিলা ইয়াসমিন
২৫, জুলাই, ২০১৯, ৬:২৩ অপরাহ্ণ - লতিফা বেগম
২৭, নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ - ডাক্তার ফাহামিদা সাবিনা
সাম্প্রতিক লেখাসমূহ »
২২, আগস্ট, ২০২১, ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ - Aysha
১৪, আগস্ট, ২০২১, ৭:৫৮ অপরাহ্ণ - Aysha Biswas
২৩, জুলাই, ২০২১, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ - Akhi Akber
২৩, জুলাই, ২০২১, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ - Sidratul Momotha Rim