দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে গ্রন্থিটি সেটা হলো থাইরয়েড যে কয়টি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি দেহের সামগ্রিক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, থাইরয়েড তাদের অন্যতম। থাইরয়েডের সমস্যা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে, যা দেহের থাইরয়েড গ্রন্থির ওপর প্রভাব ফেলে। এখন অনেকেরই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা যায়।
জেনে নিন থাইরয়েড এর ৬ টি কারন :
১. থাইরয়েডের কারনে অতিরিক্ত ক্লান্তি :
যখন থাইরয়েড হরমোন ঠিক মত কাজ করে না, এটি শরীরের মেটাবলিজমের উপর প্রভাব ফেলে দিয়ে থাকে। যা অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং আলস্য সৃষ্টি করে। অপরদিকে হরমোন ভারসাম্যহীনতা সমগ্র নার্ভ এর উপর প্রভাব ফেলে থাকে।
২. থাইরয়েডের কারনে ওজন বৃদ্ধি অথবা ওজন হ্রাস :
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ইনসুলিন এবং মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করে। যা আপনার শরীরের চর্বি জমিয়ে ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হঠাৎ করে ওজন বৃদ্ধি থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হতে পারে। অপরদিকে থাইরয়েড যদি শরীরের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ করতে থাকে, তখন শরীর অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন হারাতে থাকে।
৩. থাইরয়েডের কারনে অতিরিক্ত চুল পড়া :
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যায়, চুল পড়া একটি সাধারণ লক্ষণ। হাইপো ও হাইপারথাইরয়েডিজম দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে কেশ হানি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড সমস্যা দূর করা গেলে আবারও চুল গজানো শুরু হতে পারে।
৪. থাইরয়েডের কারনে ঘুমের সমস্যা :
হঠাৎ করে ঘুমের সমস্যা শুরু হওয়া থাইরয়েডের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত হরমোন (টি৩, টি৪) নিঃসৃত হওয়া নার্ভকে উজ্জীবিত করে যা অনিদ্রার কারণ হয়ে থাকে, এমনটি ধারণা দিয়েছেন মায়ো ক্লিনিকের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. হোসেইন গরীব। অপরদিকে সারা রাত ভাল ঘুম হবার পরেও আপনি যদি সকালে ক্লান্তবোধ করে থাকেন, সেটিও থাইরয়েডের সমস্যার কারণ হতে পারে।
৫.থাইরয়েডের কারনে ঠাণ্ডা অনুভূত হওয়া অথবা তাপ সহ্য করতে না পারা :
অতিরিক্ত থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হওয়ার কারণে তাপ সহ্য করার ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, সবসময় ঠান্ডা অনুভূত হওয়াও থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৬. থাইরয়েডের কারনে কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি :
রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধি হলে হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
এছাড়া এক নাগাড়ে কোষ্ঠকাঠিন্য, রুক্ষ ত্বক, হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি থাইরয়েডের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
থাইরয়েডের সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শ :
ছোট ছোট দৈনন্দিন সমস্যাকেও অবহেলা করবেন না। হতে পারে তা কোনো জটিল রোগের চিহ্ন। গর্ভকালীন মায়ের সামান্য থাইরয়েড সমস্যাও অনাগত শিশুর ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে বা গর্ভধারণ করলে একবার থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করিয়ে নিন। থাইরয়েডের যেকোনো সমস্যার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি এবং বারবার পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করতে হয়। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
থাইরয়েডের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারে এমন কিছু খাবার
থাইরয়েড ভালো রাখার সহায়ক খাবার সম্পর্কে জেনে নিন:
সবুজ পাতা:
পালং শাক আর লেটুস আপনার খাবারের তালিকায় নিয়মিত রাখুন। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও নানা খনিজ। সবুজ পাতা আপনার থাইরয়েডকে সুস্থ রাখবে। ফলে শরীরও থাকবে সুস্থ।
বাদাম:
বাদামজাতীয় খাবার নিয়মিত খাবেন। বিশেষ করে কাজুবাদাম। এ ছাড়া কুমড়ার বীজও কাজের। এতে আছে আয়রন ও সেলেনিয়াম, যা থাইরয়েড ভালো রাখে।
সামুদ্রিক খাবার:
সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর আয়োডিন থাকে বলে তা থাইরয়েড ভালো রাখে। এ গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বাড়াতে আয়োডিন গুরুত্বপূর্ণ বলে সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ির মতো খাবার খেতে পারেন।
আয়োডিনযুক্ত খাবার:
ঠিকমতো কাজ চালাতে থাইরয়েডে আয়োডিনের প্রয়োজন পড়ে। বাড়িতে আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে পারেন।
ডিম:
ডিমে আছে সেলেনিয়াম। এই খনিজ থাইরয়েডের টি৪ হরমোনকে রূপান্তর করে কার্যকর টি৩ হরমোনে পরিণত করে। তাই থাইরয়েড সুস্থ রাখতে ডিম খেতে পারেন।
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।