আজ আমি আপনাদের সাথে একদম ঘরোয়া একটা মাছের রেসিপি নিয়ে আলোচনা করব। এই রেসিপিটি হচ্ছে চুনো মাছের আম টক। আসলে আমাদের দেশটা মূলত নদীমাতৃক একটি দেশ। এই দেশের মানুষ ছোট বেলা থেকেই মাছ খেয়েই বড় হয়েছে। এই কারণেই তো বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙ্গালি। ছোট বড় নরম শক্ত সব ধরণের মাছ খেতেই আমরা অভ্যস্ত। তা সে মাছের মশলা দার ভুনা হোক কিংবা অল্প তেল মশলায় মাছের পাতলা ঝোল। দুপুরে বাঙ্গালির খাবার টেবিলে গরম গরম ঝরঝরে সাদা ভাতের সাথে এক প্রকার এর মাছ লাগবেই লাগবে। তবে সব সময় কি একই রকম ভাবে মাছ খেতে ভাল লাগে বলুন? মাঝে মাঝে স্বাদে বদল আনা যেতেই পারে। এই যেমন সব সময় আমরা সাধারণত আলু দিয়েই চুনো মাছ চচ্চরি করে খেয়ে থাকি। কিন্তু এই চুনো মাছ দিয়ে কিন্তু অসাধারণ স্বাদের টক রান্না করা যায়। আজ আমি আপনাদের সাথে সে অসাধারণ টক এর রেসিপিই শেয়ার করতে চলেছি।
চুনো মাছ খুব উপকারি একটি মাছ। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য। এই মাছ আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তাই ছোট বড় সকলেরই উচি তাদের ডায়েটে মাঝে মধ্যে চুনো মাছ যোগ করা। কিন্তু এই মাছটি ছোট মাছের দলে পড়ার কারণে অনেকেই এটি খেতে খুব একটা পছন্দ করেন না। বিশেষ করে বাচ্চারা তো ছোট মাছ দেখলেই দৌড়ে পালায়। কিন্তু ভাল স্বাস্থ্যের জন্য চুনো মাছ খাওয়া তো লাগবেই। এক্ষেত্রে আপনি এই চুনো মাছের আম টক আনিয়ে দেখতে পারেন। আসলে রোজ রোজ একই ভাবে খাবার রান্না না করে খাবারে একটু যদি ভিন্নতা আনা যায় তাহলে তা সবার মনেই কৌতুহলের সৃষ্টি করে থাকে। আর এই কৌতুহল থেকেই দেখা যায় বাচ্চারা বেশ খানিকটা খাবার খেয়ে নেয়। আর এই চুনো মাছের আম টক রেসিপিটিতে টক, ঝাল আর সামান্য মিষ্টি স্বাদের এক অনন্য মেল বন্ধন তৈরী করা হয়েছে। তাই খাবার টেবিলে এই খাবারটি পেলে যে কেউই পুরো খাবার না খেয়ে উঠবে না।
চুনো মাছের টক ঝোল তৈরির উপকরণ :
চুনো মাছের আম টক কিন্তু খুব সাধারণ একটী রেসিপি। এক মাত্র কাঁচা আম বাদে এই রান্নাটি করার জন্য আর কোন আনকমন মশলা কিংবা উপকরণ ব্যবহার করার দরকার হয় না। বরং আমরা সাধারণ ভাবে চুনো মাছ রান্না করার সময় সাধারণত পেঁয়াজ আর রসুন ব্যবহার করে থাকি স্বাদ বাড়াবার জন্য। এই চুনো মাছের আম টক বানাবার জন্য সেই দুটি জরুরী উপকরণ ব্যবহার করারও কোন দরকার নেই। শুধু মাত্র কাঁচা আম আর সাথে অল্প কিছু অতি সাধারণ গুড়ো মশলা ব্যবহার করেই খুবই সহজে এই চুনো মাছের আম টক আপনি ঘরে বসে বানিয়ে নিতে পারবেন। আসুন দেরী না করে কি কি উপকরণ ব্যবহার করে এই চুনো মাছের আম টক রেসিপিটি বানাতে হবে তা জেনে নেই। সেই সাথে এই উপকরণ গুলো ঠিক কত টুকু পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে তাও জেনে নেয়া যাক।
চুনো মাছ ১ কাপ
সরষের তেল ২ টেবিল চামচ
আস্ত পাঁচফোড়ন ১/২ চা চামচ
আস্ত শুকনা মরিচ ৩ থেকে ৪টি
কাঁচা আম বাটা ২ চা চামচ
আদা বাটা ১/২ চা চামচ
সরষে বাটা ১ চা চামচ
হলুদ গুড়া ১/২ চাচামচ
লাল মরিচ গুড়া ১ চা চামচ
ভাঁজা জিরা গুড়া ১ চা চামচ
ভাঁজা ধনে গুড়া ১/২ চা চামচ
লবণ পরিমাণ মত
চিনি ১ চা চামচ
আস্ত কাঁচা মরিচ ৫ থেকে ৬টি
মিহি করে কুচি করে রাখা ধনে পাতা ২ চা চামচ
মিহি করে কুচি করে রাখা পুদিনা পাতা ১ চা চামচ
পানি পরিমাণ মত
ভাপিয়ে রাখা কাঁচা আম ৪ থেকে ৫ টুকরা
চুনো মাছের টক ঝোল তৈরির পদ্ধতি :
চুনো মাছের আম টক বানানো খুবই সহজ। তবে এই রান্নাটির বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। আর এই রান্নার ভিন্নতা হচ্ছে এতে পেঁয়াজ কিংবা রসুন একেবারেই ব্যবহার করা হয়নি। বরং এই দুটি মশলার বদলে সামান্য পরিমাণে আদা বাটা ব্যবহার করা হয়েছে যেটা সাধারণত কোন ধরণের মাছ রান্নাতে আমরা বাঙ্গালিরা ব্যবহার করিনা। তবে যতই ভিন্ন ধরণের রেসিপি হোক না কেন, সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে এই রান্নাটি শুরু করলে মাত্র পনেরো মিনিট থেকে বিশ মিনিটের মধ্যেই আপনি এই রান্নাটি শেষ করে ফেলতে পারবেন। আসুন কি কি ধাপ অতিক্রম করে এই চুনো মাছের আম টক রেসিপিটি রেডি করতে হবে তা জেনে নেয়া যাক।
১ম ধাপ :
প্রথমে চুনো মাছ গুলো নুন আর হলুদ গুড়ো দিয়ে মেখে দশ মিনিট থেকে পনেরো মিনিট মেরিনেট করতে হবে। তবে আপনার যদি তাড়াহুড়ো থাকে তবে মেরিনেট না করলেও অলবে। এর পরে এই মেরিনেট করা মাছ গুলো সরষের তেলে সুন্দর করে ভেজে তুলে রাখতে হবে। একটু কড়া করে ভাজলে ভাল হয়। কারণ চুনো মাছ এমনিতেই বেশ নরম হয়ে থাকে। যদি শুরুতে কড়া করে ভাঁজা না হয় তখন পরে কাঁচা আম বাটার সাথে কষিয়ে রান্না করার সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।
২য় ধাপ :
এই বার একটা কড়াতে আবারো কিছুটা সরষের তেল গরম করতে হবে। এই গরম সরষের তেলে আস্ত শুকনা লঙ্কা ভেজে নিতে হবে। আস্ত শুকনা লঙ্কা ভাঁজা হয়ে গেলে গরম সরষের তেল থেকে তুলে নিতে হব এবং একটা পাত্রে রেখে একটু ঠান্ডা করে নিতে হবে। ভাঁজা আস্ত শুকনা মরিচ গুলা একটু ঠান্ডা হয়ে গেলে হাত দিয়ে ভাল করে কচলে গুড়া গুড়া করে নিতে হবে। এই গুড়া গুড়া ভাঁজা শুকনা মরিচ এই চুনো মাছের আম টক রান্নার একদম শেষ পর্যায়ে ব্যবহার করা হবে।
৩য় ধাপ :
এই বার আস্ত শুকনা মরিচ ভাঁজা ঐ গরম সরষের তেলের মধ্যেই আস্ত পাঁচফোড়ন দিয়ে দিতে হবে। এগুলো একটু ফুটে উঠলেই এর মধ্যে কাঁচা আম বাটা দিয়ে দিতে হবে। সেইস আথে দিতে হবে হলুদ গুড়া, লাল মরিচ গুড়া আর আদা বাটা। এই মশলা গুলো খুব ভাল করে কষিয়ে নিতে হবে। কশানোর সময় দরকার হলে অল্প অল্প করে পানি যোগ করতে হবে যাতে করে এই মশলা গুলো থেকে কাঁচা কাঁচা ভাব একদম দূর হয়ে যায় এবং এগুলো না পুরে যায়।
৪র্থ ধাপ :
কাঁচা আম বাটা কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে সরশে বাটা, ভাঁজা জিরা গুড়া ও ভাঁজা ধনে গুড়া যোগ করতে হবে। নেরে চেরে মিশিয়ে দিতে হবে। পরিমাণ মত লবণ ও চিনি যোগ করতে হবে। ভাল অত কষে এর মধ্যে আগে থেকে ভেজে রাখা চুনো আছ গুলোও যোগ করে দিতে হবে। খুব অল্প সময় মাছ দিয়ে কষাতে হবে। চুনো মাছ এমনিতেই অনেক ছোট। তার উপর আগে থেকে ভেজে নেয়া হয়েছে। তাই খুব বেশি সময় নিয়ে কষানোর দরকার নেই। অল্প সময় ধরে চুনো মাছ কষে নিয়ে পানি দিয়ে দিতে হবে। পানি ফুতে উঠলে চুলার আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৫ম ধাপ :
মাছ হয়ে আসলে আস্ত কাঁচা মরিচ, মিহি করে কুচি করে রাখা ধনে পাতা আর পুদিনা পাতা ছড়িয়ে দিয়ে হবে। আরো দুই মিনিট থেকে তিন মিনিট ফুটিয়ে চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যাস রেডি মজাদার ও একদম ভিন্ন স্বাদের চুনো মাছের আম টক। এই বার এক প্লেট গরম গরম ঝরঝরে ভাতে সাথে বসে পড়ুন। আর কিছুই লাগবে দুপুরের খাবার জমে যাবার জন্য।
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।