ওজন কমানোর জন্য আমরা কত কিছুই না করি! শরীরকে একটি সুন্দর আকৃতি দেয়ার জন্যও এই ধরনের চেষ্টা আমরা করে থাকি। ওজন কমানোর উদ্যোগকে আরো ফলপ্রসূ করতে আজ রইল কিছু অব্যর্থ উপায়।
ভেষজ মশলা হিসেবে মেথি বীজ আমাদের সবার কাছেই বেশ পরিচিত। সেই সাধারণ মেথিরও কিন্তু আপনার ওজন কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক মেথি ব্যবহার করে ওজন কমানোর ৫টি দুর্দান্ত কৌশল।
ওজন কমাতে মেথির কার্যকর ৫টি ব্যবহার :
ভাজা মেথি ব্যবহার :
এটি হচ্ছে ওজন কমানোর জন্য চমৎকার একটি উপায়। কিছুটা মেথি একটি প্যানে বা কড়াইতে নিয়ে কম আঁচে ভেজে নিয়ে সেটাকে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর সামান্য উষ্ণ গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে এবং সেই সঙ্গে এই মেথি গুঁড়া চাইলে তরকারিতেও ব্যবহার করতে পারেন ওজন কমানোর জন্য। উপকার পাবেন।
মেথি ভেজানো পানি :
মেথি ভেজানো পানি খেলে তা ওজন কমাতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারণ, এটি খেলে তা খাবারের পরিতৃপ্তি এনে দেয়। যার ফলে খিদে কম অনুভূত হয় এবং খাওয়ার ইচ্ছেটা কমে যায়। এর ফলে খুব দ্রুত ওজন কমে। মেথি আরো একভাবে খেতে পারেন। ১ কাপ মেথি পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর পানি ছেঁকে নিয়ে ভেজানো সেই মেথিবীজগুলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে হবে। এইভাবে প্রতিদিন নিয়মিত খেতে পারলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যাবে।
অঙ্কুরিত মেথিবীজ :
অঙ্কুরিত মেথিবীজ উচ্চ মাত্রার ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই যুক্ত। এরই সঙ্গে এর মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, পটাসিয়াম, অ্যামাইনো অ্যাসিড, হজম সহায়ক খনিজ পদার্থ এবং আরো অনেক কিছু রয়েছে। একটি বাটিতে মেথিবীজ নিয়ে তা একটি পাতলা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে ঢেকে রেখে তার উপর ভারি কিছু দিয়ে ৩ রাত রেখে দিতে হবে। তারপর দেখা যাবে মেথিবীজ অঙ্কুরিত হয়েছে এবং সেই বীজগুলো খেতে পারেন। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর।
মেথি চা :
মেথিবীজের চা দুইটি কাজে সাহায্য করে। এক, ওজন কমাতে এবং দুই, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া হজম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রেও তা দারুন কাজ করে। সামান্য পানি দিয়ে কিছু মেথিবীজ পেস্ট করতে হবে। একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিয়ে তাতে সেই পেস্ট দিতে হবে। চাইলে তাতে কিছু ভেষজ মশলা দেওয়া যেতে পারে। যেমন, আদা বা দারুচিনি। তারপর পাত্র ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন এই চা খালি পেটে খেতে হবে। ফল হাতেনাতে পাবেন।
মেথি ও মধু চা :
দেহের আকর্ষণীয় আকৃতি পেতে ও দ্রুত ওজন কমাতে মধুমিশ্রিত মেথিবীজের চা চমৎকার কর্যকরী। প্রথমে মেথিবীজ গুঁড়ো করে নিতে হবে। সেই মেথি গুঁড়া পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে এবং এভাবে অন্তত ৩ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। তারপর সেই পানিটা ছেকে নিয়ে তাতে লেবুর রস ও মধু যোগ করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকালে খেতে হবে। এতে আপনার শরীরের ওজন দ্রুত কমবে।
এই পাঁচটি উপায়ই হচ্ছে মেথিবীজ ব্যবহার করে কার্যকরভাবে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া। তাহলে আর দেরি কেন? আজ থেকেই শুরু করে দিন যে কোনো একটি পদ্ধতির ব্যবহার।
মেথির ব্যবহারের উপকারিতা :
রূপ আর চুলের চর্চায় মেথি বহুল পরিমাণে ব্যবহার হয়ে থাকে। জানতে চান কিভাবে এই মেথি আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগতে পারে? তাহলে জেনে নিন মেথিকে কিভাবে করে তুলতে পারেন আপনার প্রিয় বন্ধু।
স্বাস্থ্যের জন্য মেথির উপকারিতা :
Health Benefits of Fenugreek Seeds in মেথিদানা ভিজানো জল প্রোটিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেলে হজমের সমস্যা ধীরে ধীরে চলে যেতে বাধ্য।
১) ডায়াবেটিস
মেথির বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অন্যান্য উপাদান থাকে যা হজমের ক্ষমতা এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট আর সুগার শোষণ করে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। মেথি শরীরে ইন্সুলিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় |
বর্তমানে করা রিসার্চ অনুযায়ী প্রতিদিন গরম জলে ভিজিয়ে রাখা ১০ গ্রাম মেথির বীজ ডায়াবিটিস টাইপ ২ নিয়ন্ত্রণ করবার জন্য দারুণ কার্যকর। মেথির গম দিয়ে বানানো রুটি, পাউরুটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষদের ইনসুলিন প্রতিরোধ করবার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়
২) কলেস্টেরল
মেথি শুধুমাত্র রক্তে উপস্থিত কলেস্টেরল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে তা নয় আপনার শরীরকেও ধীরে ধীরে কলেস্টেরল থেকে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে ভীষণভাবে সক্ষম।
মেথি শরীরের লিপো প্রোটিন বা ব্যাড প্রোটিন কমাতে সাহায্য করে। মেথির বীজে উপস্থিত স্টেরয়েডাল স্যাপোনিন ক্ষুদ্রান্তে কলেস্টেরল-এর আত্তীকরণের হার কমিয়ে দেয়। এছাড়া লিভার থেকে উৎপন্ন তরলের শোষণের হার কমিয়ে দিতেও কার্যকর। চর্বিযুক্ত খাবার থেকে নির্গত হতে থাকা ট্রিগ্লাইসারাইড-এর শোষণের মাত্রাও মেথি কমিয়ে দিতে সক্ষম।
৩) বাতের ব্যাথা
Arthritis বা বাতের ব্যাথা প্রায় সকল চল্লিশোর্ধ্ব মানুষেরই সমস্যা। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর প্রতিবেদন অনুসারে মেথির ইস্ট্রোজেনের ওপরে প্রভাব এতটাই বেশি যে বর্তমানে ডাক্তারেরা মেথির ব্যবহারকে ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সাথে তুলনা করছেন। মেথি বাতের তীব্র ব্যথা বেদনা কমাতে ভীষণভাবে কার্যকর।
৪) হার্টের স্বাস্থ্য
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় মেথির উপকারিতা অপরিসীম। মেথি শরীরে থেকে অ্যাসিডের পরিমাণ খুব দ্রুত কমাতে পারে। শরীরের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এর থেকে কার্যকরী ভেষজ মেলা ভার। মেথির বীজ সারারাত্রি জলে ভিজিয়ে রেখে দিয়ে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেয়ে নিলে হার্টের ব্যাথা বা বুক জ্বালার মতন সমস্যা গুলো ওষুধ না খেয়েই ঘরোয়া পদ্ধতিতে কমে যাবে।
৫) মাসিকের ব্যাথা
পিরিয়ডস-এর ব্যাথা প্রায় সব মেয়েদের জীবনেই বিভীষিকার মতন এবং মাসের ওই বিশেষ দিনগুলিতে মেজাজ খারাপ থাকা বা স্কুল কলেজ কামাই করবার মতন ঘটনা প্রায় সবার জীবনেই ঘটেছে। চিন্তা নেই- রান্নাঘরেই মিলবে এর সমাধান!
ইউটেরাসে মৃত টিস্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকলেই পিরিয়ডস-এর ব্যাথা শুরু হয়। মাসের ওই বিশেষ দিনগুলিতে গরম গরম মেথি দিয়ে বানানো চা হতে পারে এই ব্যাথার হাত থেকে মুক্তি পাবার মোক্ষম দাওয়াই।
৬) হজম
মেথির বীজে প্রচুর ফাইবার এবং অন্যান্য উপাদান থাকে যা কিনা হজমের ক্ষমতা এবং শরীরের কার্বোহাইড্রেট আর সুগার শোষণ করে নেওয়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। মেথিদানা ভিজানো জল প্রোটিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেলে হজমের সমস্যা ধীরে ধীরে চলে যেতে বাধ্য।
৭) ক্যান্সার
সাম্প্রতিক কালের একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মেথির ব্যবহার করবার ফলে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা কমেছে। কর্কটরোগ থেকে রক্ষা পেতে ডাক্তারেরা রান্নায় মেথির ব্যবহার করতেও বলছেন। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য মেথি রান্নায় অবশ্যই মেশানো উচিৎ কেননা মেথিতে উপস্থিত ট্রাইগ্লিসেরাইড এস্ট্রোজেন গ্রহণকারী মডিউলেটারের কাজ করে এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে উদ্দীপিত করতে করতে একসময়ে ধ্বংস করে দেয়।
৮) ব্রেস্টের দুধ উৎপাদন
মেথিতে উপস্থিৎ ডায়োসজেনিন দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে | মেথিতে উপস্থিৎ ভিটামিন, মিনারেল মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে তা নবজাতকের জন্য অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের করে তোলে |
৯) ওজন কমাতে মেথি
মেথি দানা হল লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ভিটামিন বি সিক্স, প্রোটিন, ফাইবার, অনেক উপকারী ভিটামিন এবং খনিজের উৎস। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ফ্লামেটরী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
মেথি বীজে এক ফাইবার থাকে যা গ্যালাক্টোমান্নান নামে পরিচিত এবং সহজে জলে গুলে যায়, যা ওজন পরিচালনায় এবং আপনাকে পূর্ণ অনুভব করিয়ে খিদের অনভূতিকে প্রশমন করে ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের মেটাবলিসম কে বৃদ্ধি করে, যার ফলে মেদ ঝরে যাওয়া এবং অন্য এডিপোশ টিসুর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়ে যায়।
২০১৫ সালের এক গবেষণায়, নয়জন ওভারওয়েট কোরিয়ান মহিলা লাঞ্চের আগে একটি শিম, মেথি, এবং প্লাসিবো চা পান করেছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী মেথি চা যারা পান করেছিলেন তারা কম ক্ষুধার্ত এবং পূর্ণ অনুভূব করেছিলেন।
১০) রক্তচাপ
মেথির বীজ উচ্চ পটাসিয়াম এবং ফাইবার সামগ্রীর উপস্থিতির কারণে রক্তচাপ হ্রাসের জন্য কার্যকর উপাদান। এক বা দুই চা চামচ মেথি দানা জলের মধ্যে দুই মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিন, সেটি ছেঁকে নিয়ে বীজগুলিকে একটি ব্লেন্ডারের ভিতরে দিয়ে একটি পেস্ট বানান এবং সেটি দিনে দুবার সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। এটি অনুসরণ করলে আপনি দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই উন্নতি লক্ষ্য করবেন।
১১) কিডনির কার্যকারিতা
২০০৭ সালে “ফাইটোথেরাপি রিসার্চ”-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ক্যালসিয়াম অক্সালেট জাতীয় কিডনির পাথর প্রতিরোধ করতে মেথি সক্ষম। গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে যে মেথি গ্রহণকারী প্রাণীগুলির কিডনিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম ক্যালসিফিকেশন হয়েছে।
১২) লিভার
২০০৭ সালে প্রকাশিত “জীববিজ্ঞান ও বিষবিদ্যাবিষয়ক” গবেষণায় এস কাভিয়ারসন বলেছেন, মেথি অ্যালকোহলযুক্ত ক্ষতির বিরুদ্ধে লিভারকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। দীর্ঘদিন এলকোহলে আসক্ত মানুষদের চর্বিযুক্ত লিভার ও ফাইব্রোসিস থাকে যা কোলাজেন সংশ্লেষণের দ্বারা নির্মূল করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় যে, মেথি লিভারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমগুলির ক্রিয়াকলাপ বাড়ায়
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।