থাইরয়েড গ্ল্যান্ড হল একটি অন্তক্ষরা গ্রন্থি। যেটা থেকেই নিঃসৃত হয় থাইরয়েড হরমোন। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা হরমোন। কারণ এটি থেকে শরীরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন হয়। এই গ্ল্যান্ড দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। যেটি গলার একটি অংশে অবস্থিত। এই থাইরয়েডের ক্ষরণ কিন্তু একটা সঠিক পরিমাণে হয়।
মানে শরীরের যতটুকু দরকার তততুকু। কিন্তু শরীরের এই প্রয়োজনের থেকে যখন বেশি বা কম ক্ষরণ হয়, তখনই সমস্যা হয়। এটি একদিনেই হয় না। ধীরে ধীরে হয়। তাই সমস্যাও ধীরে ধীরে দেখা যায়। এটি যেহেতু শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে, তাই শরীরের ভেতরে ক্ষতিও ধীরে ধীরে হয়। যেহেতু এটা খুব ধীরে হয়, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মহিলারা বুঝতেই পারেন না তাদের এই সমস্যার কথা। কিন্তু যখন খুব সমস্যা হয়, তখনই যান ডাক্তারের কাছে। তাই বুঝে নিন কিছু লক্ষণ।
যেভাবে প্রথম থেকেই বুঝবেন আপনার থাইরয়েড সমস্যা হয়েছে :
১.ওজনের তারতম্য :
হঠাৎ ওজনের তারতম্য ঘটে। হঠাৎ ওজন খুব বেড়ে যেতে পারে। আবার কমেও যেতে পারে। হঠাৎ শরীর খুব ফুলে যেতে পারে। হয়তো আপনি ডায়েট কন্ট্রোল করছেন নিয়ম মেনে, কিন্তু তাও মোটা হয়ে যাচ্ছেন। নাহলে হয়তো ঠিক মতোই খাওয়াদাওয়া করছেন কিন্তু তাও খুব রোগা হয়ে যাচ্ছেন। তাহলে ফেলে রাখবেন না। ডাক্তারের কাছে যান। কারণ এটা থাইরয়েড সমস্যার একটা লক্ষণ।
২.মানসিক সমস্যা:
কিছু কিছু মানসিক সমস্যাও দেখা যায়। যেমন মানসিক উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা। সব বিষয়েই উদ্বেগ বা হঠাৎ সবসময় বিষণ্ণতা কাজ করে। এটা কিন্তু সবসময় শুধু মানসিক সমস্যার কারণে হয় না। এটা হঠাৎ খুব বেশি পরিমাণে হলে, ডাক্তারের কাছে যাওয়াই ভালো।
৩.শরীরে তাপমাত্রার পরিবর্তন:
থাইরয়েড সমস্যা হলে, মাঝে মাঝে শরীরে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। যেমন কখনো হয়তো খুব ঠাণ্ডা লাগতে পারে। আবার কখনো খুব শীত করতে পারে। এটা কিন্তু হয় ঋতু পরিবর্তন ছাড়াই হয়। মানে শীতকালেও হয়তো হঠাৎ আপনার গরম বেশ লাগছে। এটা খুব বেশি হলে বুঝতে হবে থাইরয়েড প্রবলেম।
৪.স্কিন খুব শুকিয়ে যায়:
শীতকালে স্কিন শুকিয়ে যাবেই, কিন্তু শীতকাল ছাড়াও কি স্কিন খুব ড্রাই হয়ে যাচ্ছে? ময়েশ্চারাইজার মাখছেন, জল খাচ্ছেন কিন্তু তাও যেন স্কিন বেশ ড্রাই লাগছে। ড্রাই স্কিন ভেবে একে এড়িয়ে যাবেন না। এটা হতেই পারে থাইরয়েডের সমস্যা।
৫.চুল পড়া:
আপনার কি হঠাৎ খুব চুল পড়ছে? অনেক ট্রিটমেন্ট করেও কোনো লাভ হচ্ছে না? তাহলে এটা থাইরয়েডের সমস্যার একটা লক্ষণ। একদম ফেলে রাখবেন না। যান ডাক্তারের কাছে। শরীরে হরমোনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে, চুল পড়া তার একটা অন্যতম লক্ষণ।
৬.ঘাড়ে অস্বস্তি:
এমনিতে ঘাড়ের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু হঠাৎ কিছুদিন ধরে ঘাড়ে প্রবল অস্বস্তি অনুভব করছেন? সঙ্গে গলার স্বরেরও পরিবর্তন। মানে গলার স্বর বেশ কর্কশ হয়ে যায়। যখন থাইরয়েডের সমস্যা হয়। তাই খেয়াল রাখুন।
৭.শরীরে ব্যথা:
হঠাৎ গাঁটে বা পেশীতে ব্যাথা অনুভব করছেন? যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট করিয়েও এটা না কমে, এবং খুব বেশি হয়, বা অনেকদিন ধরে হয়, তাহলে বুঝতে হবে থাইরয়েডের সমস্যা হচ্ছে শরীরে।
৮.পিরিয়ডের সমস্যা :
অনেকেরই পিরিয়ড অনিয়মিত হয়। বা পেট ব্যথা করে। এগুলো তো পিরিয়ডের সাধারণ সমস্যা। কিন্তু ধরুন দেখলেন, একমাসে হল কিন্তু পরের মাসে আর হলই না। বা একমাসে যে পরিমাণ হল পরের মাসে হঠাৎ খুব কম হল। আর এই জাতীয় পিরিয়ডের অনিয়ম যদি চলতেই থাকে, তাহলে একদমই ফেলে রাখবেন না। কারণ এটাও থাইরয়েড সমস্যার একটা লক্ষণ।
তাহলে ওপরের এই লক্ষণগুলো যদি আপনার শরীরে প্রকাশ পায়, তাহলে যে থাইরয়েডের সমস্যা হয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা নেই। কিন্তু এতগুলো লক্ষণের মধ্যে একটা লক্ষণ প্রকাশ পেলে ভয় পাবার কিছু নেই। কিন্তু এর থেকে বেশি লক্ষণ প্রকাশ পেলে, অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।