অনিদ্রা সমস্যা? অনিদ্রার সমস্যা কতটা মারাত্মক হতে পারে তা যারা এ সমস্যায় ভুগছেন তারা বেশ ভালো ভাবেই জানেন। রাতে ঘুম না আসা বা মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম আসে না এ সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা বলা হয়।। রাতের পর রাত এ সমস্যা চলতে থাকলে জটিল ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণেই মানুষ অনিদ্রায় ভুগেন। মানুষের ঠিকমতো ঘুম না হলে ওজন বেড়ে যাওয়া, উদ্বেগ, অবসাদ এবং নানা ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রকৃতি সব সময়ই মানুষের প্রতি নিজের প্রাচুর্য দিয়ে দয়া দেখিয়েছে। আসুন জেনে নেই কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে অনিদ্রা দূর করা যায়।
অনিদ্রা দূর করার উপায় :
১. অশ্বগন্ধা
শতশত বছর ধরে ভারতবর্ষে এই ভেষজটি অনিদ্রার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজকাল অনিদ্রার একটি বড় কারণ উদ্বেগ। কারণ উদ্বেগ আমাদের দেহের হরমোনগত ভারসাম্য নষ্ট করে। অশ্বগন্ধা এই সমস্যা দূর করতে পারে। এটি মানসিক চাপ ও উদ্বেগসংক্রান্ত হরমোন কর্টিসোলের নিঃসরণ কমিয়ে আনে। কিন্তু এতে দেহের কোনো শক্তি ক্ষয় হয় না। এটি সেবনে মন প্রশান্ত হয়ে আসে আর ভালো ঘুম হয়।
২. ল্যাভেন্ডার
মিষ্টিগন্ধযুক্ত এই গুল্মটি অনিদ্রার দুর্দান্ত একটি ওষুধ। স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে ঘুমের বিশৃঙ্খলা দূর করে এটি। উত্তেজিত স্নায়ুর জন্য একটি কার্যকর টনিক হিসেবে কাজ করে এটি। রাতে ঘুমানোর আগে কয়েকফোটা ল্যাভেন্ডার তেলমিশ্রিত পানিতে গোসল করলে অসাধারণ ফল পাওয়া যায়। আরেকটি ভালো উপায় হতে পারে এক কাপ উষ্ণ ল্যাভেন্ডার চা পান করা। বা বালিশে ল্যাভেন্ডার মিস্ট স্প্রে করে দেওয়া। এতে উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ কমে আসবে এবং ভালো ঘুম হবে।
৩. প্যাশন ফ্লাওয়ার বা প্রণয় ফুল
দেখতে খুবই সুন্দর এই ফুলটির আছে অনিদ্রা দূর করার শক্তিশালী সব উপাদান। স্মরণাতীতকাল থেকেই ফুলটি মানসিক চাপ দূর করার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে আছে অ্যালকালয়েডস, ফ্ল্যাবোনস, কাউমারিনস এবং দমণমূলক নিউরোট্রান্সমিটার- জিএবিএ। এসব উপাদান উদ্বেগ ও মানসিক চাপ দূর করে মনকে প্রশান্ত করে তোলে। স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে শান্তিপূর্ণ ঘুম এনে দেয় এটি। প্রতিদিন এই ফুলের রসের ৩০ থেকে ৬০ ফোটা ব্যবহারে দুর্দান্ত ফল পাওয়া যায়।
৪. ক্যামোমিল
ক্যামোমিল চা অনিদ্রা দূর করে। এতে থাকা বেশ কিছু ফ্ল্যাভোনয়েড স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে এবং উদ্বেগের লক্ষণগুলো দূর করতে বেশ কার্যকর।
৫. ব্রাহিমি
ব্রেন টনিক হিসেবে খ্যাত এই ভেষজটি ভালো ঘুমের সব উপাদান ধারণ করে। ভেতরগত আবেগের ঝড় শান্ত করে আমাদের দেহে স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে এটি। খাবারের সঙ্গে এই ভেষজটির পাতা ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সুফল লাভ করা যায়।
৬. লেবু বাম
ইউরোপের মধ্যযুগ থেকেই এই বিস্ময়কর ভেষজটি এর দুর্দান্ত প্রশান্তকরণ উপদানের জন্য বিখ্যাত। উদ্বেগ দূর করে ভালো ঘুমের জন্য এটি নিশ্চিতভাবে কার্যকর একটি উপাদান। এছাড়া ঘুমসংলিষ্ট বিশৃঙ্খলা দূর করতেও বেশ কার্যকর এটি।
৭. কাভা
এটি অনিদ্রা দূরকারী এবং উদ্বেগ প্রশমনকারী হলেও একটু বিপজ্জনক। কারণ এটি লিভারের ক্ষতি করতে পারে। তাই সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। তথ্যসূত্রঃ ওয়েবসাইট।
অনন্য উপায় :
১.মধু
মধুর হাজারো উপকারিতার মধ্যে একটা অনেক বড় উপকারিতা হচ্ছে এটা অনিদ্রা দূর করতে অনেক সহায়তা করে। ঘুমাতে যাওয়ার আধা ঘন্টা আগে হার্বাল চা বা হালকা গরম দুধের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। মধু স্নায়ু শীতল করতে সাহায্য করে। ফলে রাতে ঘুম হয় অনেক ভালো, অনিদ্রা দূরীভূত হয়।
২.বাদাম
অনিদ্রা দূর করার জন্য আরেকটা কার্যকরী খাবার হচ্ছে বাদাম। শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে বাদাম। এই হরমোন মস্তিষ্ককে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। বাদামেও রয়েছে ট্রাইপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১০ থেকে ১৫টি বাদাম ভালো ঘুম হতে সাহায্য করবে।
৩.দই
দুগ্ধজাত খাবার হিসেবে দইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এই উপাদান ঘুমে সাহায্যকারী ট্রাইটোফ্যান এবং মেলাটোনিন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে দই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে এই দই অবশ্যই খাঁটি হতে হবে। খাঁটি গরুর দুধ দিয়ে বানানো দই খেলেই অনিদ্রানাশক উপকারিতাটা পাবেন।
৪.ভেষজ চা
অনেকে মনে করেন লাল চা বা ‘গ্রিন টি’-এর মতো ক্যাফেইন সমৃদ্ধ ভেষজ চা গুলো রাতে ঘুমে ব্যঘাত ঘটাতে পারে। কিন্তু আসলে তা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে ক্যামোমাইল সমৃদ্ধ ভেষজ চা দুশ্চিন্তা কমায় এবং অনিদ্রার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ অনিদ্রা দূর করতে গ্রিন টি অনেক আদর্শ ভূমিকা পালন করে।
৫.অর্গানিক ডিম
অর্গানিক বা ভেজালমুক্ত ডিমে রয়েছে ট্রাইটোফ্যান নামক এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। এই প্রকারের অ্যামাইনো অ্যাসিড ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তাই ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে বা রাতের খাবারের সময় যদি অর্গানিক ডিম রাখা যায়, তবে তা অনিদ্রা রোধ করতে অনেক সাহায্য করে। তবে এ জন্য অবশ্যই সঠিক অর্গানিক ডিমের সন্ধান পেয়ে সেই অর্গানিক ডিম খেতে হবে।
৬.আঙ্গুর–আপেল
আঙ্গুর ফল অনীদ্রা দূরীকরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এটা শরীরে প্রচুর পরিমাণে মেলাটোনিন হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। আর এই হরমোন ঘুমে সাহায্য করে। অন্যান্য ফলের মধ্যে আপেল, পিচ, কলা এসব ফল অনিদ্রা দূর করে।
৭.কলা
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। আর মানুষের শরীরে পটাশিয়ামের উপস্থিতি, রাতে ঘুম কতটা গাঢ় হবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া কলার ট্রাইপটোফ্যান এবং ম্যাগনেসিয়াম রাতে ঘুম হতে সাহায্য করে। তাই ঘুমের ওষুধ বাদ দিয়ে রাতে নিয়মিত কলা খেয়ে বিছানায় যেতে পারেন। ঘুম হবে, নিশ্চিত!
৮.শাকসবজি
নিয়মিত রাতের খাবারে শাকসবজি খেলে অনিদ্রা জনিত কোন সমস্যাই থাকে না আর। তাই রাতের খাবারে ভারী খাবার পরিহার করে শাকসবজি জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন, শান্তির ঘুম ঘুমান!
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।