মাথার সামনের চুল গজাতে যে প্রোডাক্ট অনবরত ব্যবহার করছেন,তাতে কি সত্যি মনের মত ফল পেয়েছেন? না তো। তাই ব্যবহার করুন এমন কিছু,যা সত্যি ভেতর থেকে সাহায্য করবে নতুন চুল গজাতে। জানেন কি?আপনার হাতের কাছেই আছে চারটে খুব সহজ উপাদান,যেগুলো নতুন চুল গজাতে জাস্ট অনবদ্য। যেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে,মাত্র একমাসেই পেতে পারেন সমাধান।কি সেই উপাদান?আর কিভাবেই বা ব্যবহার করবেন। চটপট দেখে নিন।
দারুণ উপকারী ক্যাস্টর অয়েল –
ক্যাস্টর অয়েলের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন?নতুন চুল গজাতে সত্যি এর থেকে ভালো উপাদান বোধহয় আর কিছু হয় না।সেই জন্য যাদের ভুরু খুব কম থাকে,তাদের ক্যাস্টর অয়েল লাগাতে বলা হয় যাতে ভুরু মোটা হয়।এতে থাকা রিসিনলেইক নামক এক উপাদানই নতুন চুল গজাতে এতো সহায়ক।কিভাবে লাগাবেন দেখে নিন।
উপকরণ:
১ থেকে ২চামচ ক্যাস্টর অয়েল ও ২ থেকে ৩টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
১ নাম্বার পদ্ধতি:
ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভেতর যে তেল থাকে সেটা মেশান।এরপর জাস্ট ক্যাস্টর অয়েল ভালো করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে।সারারাত একে রেখে দিন।পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন।এক্ষেত্রে কোনো মাইলড শ্যাম্পুই ভালো বা যদি ভিটামিন ই ক্যাপসুল নাও পান তাহলেও অসুবিধা নেই।শুধু ক্যাস্টর অয়েল ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন।সপ্তাহে দুদিন করুন।খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফল পাবেন।তবে পর পর দুদিন নয়।কারণ এই তেল খুব ঘন।মাঝে তিন চারদিন ছেড়ে মাখুন।আর সপ্তাহে দুদিন মাখার সময় না থাকলে,শুধু ছুটির দিনটিই মেখে নিন।একমাসের মধ্যেই মাথায় নতুন চুল চোখে পড়বে।
পেঁয়াজের রস –
পেঁয়াজে আছে প্রচুর সালফার যা নতুন চুল গজাতে দারুণ উপকারী।তাই পেঁয়াজ সত্যি অনবদ্য নতুন চুল গজাতে।
উপকরণ: ১টা পেঁয়াজ।
২ নাম্বার পদ্ধতি :
একটা পেঁয়াজ নিয়ে একটু ব্লেণ্ড করে নিন।এরপর এটা থেকে চিপে রস বার করে নিন।এই রস স্ক্যাল্পে হালকা একটু ম্যাসাজ করে লাগান।দুঘণ্টা রেখে দিন।সব থেকে ভালো আগেরদিন রাতে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিলে।তারপর পরের দিন শ্যাম্পু করে ফেলুন বা একটু পেঁয়াজ কেটে সেটাও স্ক্যাল্পে ঘষতে পারেন।এটা সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন করুন।একমাস পর দেখবেন ছোট ছোট চুল গজিয়েছে মাথায়।
রসুন ব্যবহার –
কি ভাবছেন পেঁয়াজ রসুন দিয়ে চুল গজাব?আজ্ঞে হ্যাঁ পেঁয়াজ রসুন এতটাই ভালো কাজ করে।কারণ একটাই এতে থাকা প্রচুর পরিমানে সালফার।
উপকরণ:
৪ থেকে ৫ কোয়া রসুন ও ১ থেকে ২চামচ নারকেল তেল।
৩ নাম্বার পদ্ধতি:
রসুন প্রথমে ব্লেণ্ড করে নিন।এরপর এটা থেকে রস বার করে নিন।এবার এই রসের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে গরম করুন।এই গরম তেলটা স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন বা আরও ভালো হবে এই তেলের সাথে যদি কাঁচা রসুনের রস ১চামচ মিশিয়ে নিতে পারেন তাহলে আরও ভালো কাজ হবে।এই তেল রাতে ভালো করে সমস্ত স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে লাগান।সারারাত রেখে পরেরদিন শ্যাম্পু করে ফেলুন।সপ্তাহে দুদিন করে করুন।ব্যাস তাতেই কাজ হবে।
সপ্তাহে একদিন আলুর প্যাক –
আলু শুধু না খেয়ে,চুল গজানোর চিকিৎসায় কাজে লাগান।এতেও খুব ভালো কাজ হয়।
উপকরণ:
২টা মাঝারি সাইজ আলু,১টা ডিম ও ১চামচ মধু।
৪ নাম্বার পদ্ধতি:
আলু প্রথমে ব্লেণ্ড করে নিন।এরপর এটা থেকে রস বার করে নিন।এবার এই রসের সাথে,একটা ডিমের কুসুম ও মধু যোগ করুন।অল্প একটু জল দিন।ভালো করে মেশান।এবার এই প্যাকটা স্ক্যাল্প সহ পুরো চুলে লাগান ভালো করে।আধঘণ্টা রেখে দিন।তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।মাইলড শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।এটা সপ্তাহে একবার করে টানা কয়েকমাস করুন।একটা একটা খুব ভালো ট্রিটমেন্ট নতুন চুল গজাতে।
তাহলে এখন নতুন চুল গজানো নিয়ে আর চিন্তার কিছু নেই,কারণ নতুন চুল গজানো এখন আপনার হাতের মুঠোয়।ওপরর প্রত্যেকটা ট্রিটমেন্ট অসাধারণ কাজ করে,নতুন চুল গজাতে।
জেনে রাখুন মেয়েদের চুল পড়ার কারণগুলোঃ
মেয়েদের চুল পড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিয়া বলে। মেয়েদের মাথার উপরিভাগের চুল ও দুপাশের চুল পাতলা হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ নারীর এ সমস্যা হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২৫টি চুল পড়ে স্বাভাবিকভাবেই। চুল পড়ে যাওয়া তখনই সমস্যা, যখন দিনে ১২৫টির বেশি চুল পড়ে এবং সেই চুল গজায় না। পরিবারে চুল পড়ার সমস্যা থাকলে চুল পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম। নানা রকম ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে, তখন তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুডিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায়, তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে যাওয়া মানে চুল আর বড় না হওয়া এবং একসময় চুল ঝরে যাওয়া। এর কারণ :
* শারীরিক অসুস্থতা। যেকোনো অস্ত্রোপচারের পর, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা।
* মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা, পরিবারের কারো মৃত্যু।
* থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা।
* ডায়াবেটিস পলিসিসটিক ওভারি।
* মূত্রনালির প্রদাহ।
* গর্ভাবস্থা, পরিবার পরিকল্পনার জন্য পিল খাওয়া।
* ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
* অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণ।
ডায়েট ও চুল পড়া
ওজন কমানোর জন্য অতিরিক্ত ডায়েট করা অনেক সময় চুল পড়ার কারণ। অবশ্যই ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার তালিকা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ডায়েটের সঙ্গে ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট খাওয়া প্রয়োজন। আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণে চুল পড়ে। সুতরাং ওজন কমাতে চাইলে নিজের মনমতো না করে ডায়েটিশিয়ান, নিউট্রিশনিস্ট, চিকিৎসক ও ত্বক বিশেষজ্ঞের মতামত নেবেন।
শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক চাপ ও চুল পড়া
শারীরিক অসুস্থতা, অপারেশন হওয়া ও মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুল ঝরে গেলেও আর নতুন চুল গজায় না এবং চুল বাড়ে না। শরীর সারাতে ব্যস্ত থাকে সব শক্তি এবং অনাদরে পড়ে যায় চুল। এসব ক্ষেত্রে চুল পড়তে থাকে তিন মাস, আবার চুল গজাতে সময় লাগে তিন মাস। অর্থাৎ ছয় মাস সময় লাগে চুল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। তবে শারীরিক ও মানসিক চাপ খুব বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চুল পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতা ও থাইরয়েডের সমস্যায়ও চুল পড়ে। সুতরাং খুব বেশি চুল পড়লে রক্ত পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।
হরমোনের পরিবর্তন ও চুল পড়া
হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের চুল পড়ার সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া বন্ধ করলে চুল পড়তে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের তিন মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন লক্ষ করা সম্ভব। আবার সঠিক যত্নে তিন মাসের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। রজঃনিবৃত্তি বা মাসিক বন্ধ হওয়ার পরও নারীদের চুল পড়ে।
একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।