ডোমেইন হোস্টিং কি (What is Domain Hosting) ? ডোমেইন হোস্টিং সম্পর্কে A টু Z বিস্তারিত তথ্য

আমারা যারা ব্লগার ব্যবহার করি বা নতুন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করছি তারা হয়তো অনেকেই যানিনা ডোমেইন হোস্টিং কি, বা এটা কি কাজে ব্যবহার হয় । আমাদের প্রথম যেটা যানতে হবে সেটা হল ডোমেইন ও হোস্টিং কি ? (What is Domain Hosting) হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি ? সেরা হোস্টিং কোনটি ? তার পরেই হোস্টিং কেনার জরুরী বিষয় গুলো। এক নজরে জেনে নিন আমার আজকের পোস্টে আলোচনার বিষয় কি কি ?

সুচিপত্রঃ

 

ডোমেইন এবং হোস্টিং কি ?

ডোমেইন নেম কি ?

মন‌ে করুন আপনার অফিসে বা  বাড়িতে কেউ আসতে চায়, তবে তাকে এর ঠিকানা জানতে হবে। ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে এই ঠিকানাটা হচ্ছে তার নাম যাকে বলা হয় ডোমেইন নেম। এই ডোমেইন নেমই আপনার ওয়েবসাইটকে অনন্যভাবে আইডেন্টিফাই করবে। বিশ্বের সবাই ওয়েবসাইটটিকে চিনবে এবং একসেস করবে এ নাম ব্যবহার করে।

ওয়েব হোস্টিং কী ?

কোন তথ্যকে অন্যের কাছে তুলে ধরার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সহজ মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। আজকের কম্পিউটার ব্যবহারকারী মাত্রই ওয়েবসাইট সম্পর্কে অবগত আছেন। সহজ ভাষায় বলা যায়, ওয়েবসাইট হল আপনার তথ্যকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার রাস্তা- সেটা টেক্সট বা মাল্টিমিডিয়া (যেমনঃ ছবি, অডিও বা ভিডিও) যেকোন ধরনের হতে পারে। ওয়েবসাইটে সেগুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা ওয়েব ডেভেলপারের কাজ। আর আপনার ওয়েবসাইটটি অন্যদের দেখার জন্য উপযোগী করাই ওয়েব হোস্টিং নামে পরিচিত। আপনার ওয়েবসাইটটিকে যদি তুলনা করা হয় আপনার প্রতিষ্ঠানের অফিস বিল্ডিং হিসাবে, তবে তার তথ্য বা কনটেন্ট হবে এর আসবাবপত্র। আর ওয়েবসাইট ডেভেলপ করাকে তুলনা করা যাবে বাড়িটি তৈরি করার সাথে। সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইট হোস্টিংকে তুলনা করা যায় আপনার অফিস বিল্ডিংয়ের জন্য জায়গা কেনা এবং সে জায়গায় বাড়িটি তৈরি করার সাথে। তবেই ভিজিটররা ওয়েবসাইটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবে।

আরো পড়ুনঃ বিবিসি ফ্লাই ওয়েবসাইটে বাংলা আর্টিকেল রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করুন হাজার হাজার টাকা।


হোস্টিং বা ওয়েব হোস্টিং মূলত কত প্রকারের এবং কি কি ? (Types of web hosting)

 

হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?

হোস্টিং বা ওয়েব হোস্টিং মূলত কত প্রকারের এবং কি কি ? (Types of web hosting)

ওয়েব হোস্টিং কাকে বলে বা হোস্টিং কি এইটা জানার পর, web hosting কত প্রকারের সেইটা জেনে নেয়াটাও অনেক জরুরি। ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা, security, speed আদি নির্ভর কোরে অনেক রকমের web hosting আমরা ব্যবহার করতে পারি। এমনিতে, web hosting এর অনেক প্রকার আছে। এদের মধ্যে মূলত যেগুলি সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় ব্লগ এবং ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য সেগুলি হলো –

  • শেয়ার্ড হোস্টিং (shared hosting)
  • ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WordPress Hosting)
  • ভিপিএস হোস্টিং V P S (Virtual private server)
  • ডেডিকেটেড হোস্টিং (dedicated server)
  • ক্লাউড হোস্টিং (cloud hosting)

এখন একে একে জেনে নেওযা যাক শেয়ার হোস্টিং, ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং, ভিপিএস হোস্টিং, ডেডিকেটেড হোস্টিং, এবং ক্লাউড হোস্টিং কি ? এই সব রকমের ওয়েব হোস্টিংয়ের প্রকার গুলির বেপারে চলুন আলোচনা করি।

শেয়ার্ড হোস্টিং কি ? what is shared hosting ?

শেয়ার হোস্টিং এর মানে হলো, ওয়েব হোস্টিং কে শেয়ার (share) করা। মানে, একটি web server অনেক গুলি ওয়েবসাইট শেয়ার করবেন। উদাহরণ স্বরূপে, ভেবেনিন একটি ঘর আছে এবং আপনারা অনেক বন্ধুরা সেই ঘর শেয়ার করে বা ভাব করে থাকছেন। এই ক্ষেত্রে, আপনার ঘর হলো web server এবং এবং আপনি আর আপনার বন্ধুরা যারা ঘর ভাগ করে থাকছেন তারা একটি একটি ওয়েবসাইট।

এতে, আপনার লাভ এটাই যে, আপনাদের ঘর ভাড়া সব বন্ধুরা মিলেই দিতে পারবেন। এতে আপনার অনেক কম টাকা দিতে হবে। Shared hosting এর ক্ষেত্রেও, আমরা একটি web server অনেক গুলি ওয়েবসাইট বা ব্লগের সাথে শেয়ার করি, এতে আমাদের এর জন্য অনেক অনেক কম টাকার প্রয়োজন হয়। শেয়ার্ড হোস্টিং আপনি অনেক কম টাকায় কিনেনিতে পারবেন। এবং, একটি নতুন ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য shared hosting লোকেরা বেবহার করেন।

শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared hosting) এর কিছু লাভ

  • অনেক সস্তায় এবংকম দামেই কিনতে পারবেন।
  • একটি নতুন ওয়েবসাইটেরজন্য সেরা হোস্টিং।
  • শেয়ার্ড হোস্টিং এর দাম এর কথা বললে, আপনি $ 30.00 USD থেকে $ 200 USD (Yearly)
  • ভেতরে ভালো শেয়ার্ড হোস্টিং কিনতে পারবেন।
  • এমনিতে অনেক shared hosting company রয়েছেন যারা ফ্রীতেই হোস্টিং দেন।

ভিপিএস (VPS) হোস্টিং কি ? (Virtual private server)

ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার shared hosting থেকে অনেক হাজার গুনেই ভালো। তবে হে, VPS সার্ভার আমরা তখন নেই যখন আমাদের ওয়েবসাইটে ভিসিটর্স বা ট্রাফিক অনেক আসেন এবং যখন আমাদের ওয়েবসাইট অনেক popular হয়ে যায়। প্রথম অবস্থায়, vps হোস্টিং নেয়ার প্রয়োজন আমি মনে করিনা।

তাহলে এই ভি পি এস (vps) হোস্টিং বললে আমরা কি বুঝি। যেমন, একটি বিল্ডিং (building) এ অনেকগুলি রুম (room) বানানো থাকে ঠিক সেভাবেই এই প্রকারের হোস্টিং এ একটি ওয়েব সার্ভার অনেক গুলি ভাগে ভাগ করা হয়। এবং, যেভাবে আপনি কিনে নেয়া রুমে কেবল আপনার অধিকার থাকে ঠিক সেভাবেই vps server এ আপনি কিনে নেয়া ভাগে কেবল আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের অধিকার থাকবে। আপনি, যেই ভাগটা কিনবেন সেটা কেবল আপনার ওয়েবসাইটের জন্য এবং অন্যকেও সেই ভাগ ব্যবহার করতে পারবেনা। এইটা আপনার private web server এর মতোই।  এবং, এটাই কারণ যে vps server বা vps hosting অনেক দ্রুত (fast) এবং এ বেশি ট্রাফিক বা ভিসিটর থাকা ওয়েবসাইটের জন্য লাভদায়ক।

ভি পি এস হোস্টিং এর কিছু লাভ

  • Security র হিসাবে দেখতে গেলে vps server অনেক নিরাপদ  (secure).
  • অনেক দ্রুত এবং এর কর্মক্ষমতা অনেক উচুস্থরের।
  • Share hosting থেকে অনেক গুন্ বেশি ট্রাফিক বা ভিসিটর এ হাতল (handle) করতে পারে।
  • আজকাল ভি পি এস (vps) হোস্টিং প্রায় $ 10.00 USD থেকে $ 250 USD (monthly) ভেতরে আপনি পেয়েযাবেন।

ডেডিকেটেড হোস্টিং কি ? (Dedicated web hosting)

ডেডিকেটেড হোস্টিং অন্য হোস্টিং থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, শেয়ার্ড হোস্টিং এ আপনাকে একটি ওয়েব সার্ভার অসংখ ওয়েবসাইটের সাথে শেয়ার করতে হয় এবং vps hosting এ আপনাকে ওয়েব সার্ভার এর একটি ভাগ দিয়ে দেয়া হয় যেটা কেবল আপনার।

কিন্তু, ডেডিকেটেড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনাকে একটি পুরো ওয়েব সার্ভার দিয়ে দেয়া হয় যেটা কেবল আপনার। এবং, সেই ওয়েব সার্ভারে কেবল আপনার ওয়েবসাইট এবং তার ফাইল হোস্ট করা থাকবে। ঠিক তেমনি, যখন আপনি একটি room নয় পুরো বিল্ডিং (building) টাই কিনে নিলেন এবং তার পর তাতে কেবল আপনার থাকার অধিকার থাকলো।

ডেডিকেটেড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে, কেবল একটি ওয়েবসাইট একটি সার্ভারে হোস্ট থাকার কারণে সেই ওয়েবসাইট অনেক বেশি ফাস্ট এবং দ্রুত কাজ করবে এবং নিরাপত্তার (security) দিকদিয়ে দেখলে এ অনেক নিরাপদ (secure).

কিন্তু, মনে রাখবেন, এই হোস্টিং তখন প্রয়োজন হবে যখন আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট অনেক বেশি ট্রাফিক আসবে। এবং, ডেডিকেটেড সার্ভারের দাম অনেক অনেক বেশি।

ডেডিকেটেড হোস্টিং এর কিছু লাভ

  • অনেক বেশি ট্রাফিক বা ভিসিটর্স handle করতে পারে।
  • এই রকমের হোস্টিং অনেক নিরাপদ (secure) .
  • কর্মক্ষমতা অন্যদের থেকে অনেক গুনে বেশি।
  • ওয়েবসাইট বা ব্লগ অনেক দ্রুত কাজ করবে।
  • Dedicated server আপনি মিনিমাম $ 80.00 USD (monthly) থেকে কিনতে পাবেন। কিছু ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি।

ক্লাউড হোস্টিং কি ? (Cloud hosting)

ক্লাউড হোস্টিং আজ ব্লগার এবং ওয়েবসাইট মালিকদের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রচলিত এবং ভরসার হোস্টিং সার্ভিস হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর কর্মক্ষমতা এবং স্পিড অনেক উন্নত মানের এবং এই হোস্টিং অনেক নিরাপদ। যাওয়া কিছু বছরে, cloud hosting অনেক জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং, আমি নিজেই আমার ব্লগের জন্য ক্লাউড হোস্টিং বেবহার করছি।

আসলে ক্লাউড হোস্টিং এ অনেক গুলি ওয়েব সার্ভার একসাথেই রাখা হয় এবং তাই আপনি আপনার প্রয়োজন হিসেবে সার্ভারের কিছু প্রয়োজনীয়তা যেমন CPU, RAM বা storage বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারবেন। এতে, যখনি আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা ভিসিটর বাড়বে আপনি অনেক সহজে সেই হিসেবে নিজের ওয়েব সার্ভারের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

এবং, সময়ে আপনি কর্মক্ষমতা কমিয়েও নিতে পারবেন। ক্লাউড হোস্টিং এ ওয়েবসাইট ডাউন হওয়ার সুযোগ অনেক কম এবং বেশি ট্রাফিক এ হ্যান্ডেল করতে পারে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আপনি ক্লাউড ওয়েব সার্ভারকে ভরসা করতে পারবেন।

ক্লাউড হোস্টিং এর কিছু লাভ  

  • সার্ভার ডাউন (server down) হওয়ার সুযোগ অনেক কম।
  • কর্মক্ষমতা অনেক উন্নত এবং বেশি। এবং, নিজের প্রয়োজনীয়তা হিসেবে বাড়ানো বা কমানো যাবে।
  • ওয়েবসাইটের বেশি ট্রাফিক বাভিসিটর হ্যান্ডেল (handle) করতে পারে।
  • ক্লাউড হোস্টিং এর দাম তার কর্মক্ষমতা হিসেবে তেমন কোনো বেশি নয়। $ 15.00 USD থেকে $ 300 USD (monthly) এর ভেতরে ক্লাউড হোস্টিং পেয়েযাবেন। এখানে দাম আপনার প্রয়োজনীয়তা (cpu, ram এবং storage) এর ওপরে নির্ভর করে।

ওয়েবসাইটের জন্য কোন হোস্টিং ভালো হবে ?

আশাকরি ওয়েব হোস্টিং কি এবং হোস্টিং এর বিভিন্ন প্রকারের বেপারে আমি আপনাদের বুঝিয়ে বলতে পারলাম। আসলে, ওয়েবসাইটের জন্য কোন হোস্টিং নিবেন বা কেমন হোস্টিং নিবেন সেটা আপনার ওয়েবসাইটের ওপরে নির্ভর করে।

আপনি যদি একটি ব্লগ বানানোর কথা ভাবছেন, তাহলে প্রথমে shared hosting কিনুন। আপনি অনেক কম রেট এ শেয়ার্ড হোস্টিং কিনতে পারবেন এবং প্রথম অবস্থায় আপনার ব্লগে তেমন কোনো ট্রাফিক বা ভিসিটর্স আসবেনা। যার জন্য প্রথমে শেয়ার হোস্টিং দিয়ে শুরু করতে পারেন।

তারপর যখন আপনার ব্লগে ট্রাফিক বা ভিসিটর্স আশা শুরু হবে তখন আপনি cloud hosting নিয়ে নিলে আপনার কাজ হয়ে যাবে। ক্লাউড হোস্টিং সব দিকদিয়েই সক্ষম। বেশি traffic বা visitor এ সইতে পারে, এর কর্মক্ষমতা অনেক বেশি, নিজের হিসেবে এর ক্ষমতা বাড়ানো বা কমানো যাবে, আপনার ওয়েবসাইট অনেক দ্রুত লোড (load) হবে এবং নিরাপত্তার দিক দিয়েও এ ভরসাযোগ্য। তাই, ক্লাউড হোস্টিং আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সব থেকে ভালো ওয়েব হোস্টিং প্রমাণিত হতে পারে।

এখন যদি আপনি দেখছেন আপনার ব্লগে বা ওয়েবসাইট সীমা ছাড়া ট্রাফিক আসছে এবং আপনার ব্লগ থেকে অনেক বেশি ইনকাম হচ্ছে, তাহলে আপনি Dedicated server নিতে পারেন। সীমাছাড়া ট্রাফিক ডেডিকেটেড হোস্টিং অনেক সহজে সইতে পারে। এবং, ট্রাফিক এর সাথে আপনার ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম ও হতে হবে যদি আপনি dedicated server নিতে চাচ্ছেন। কারণ, যা আমি আগেই বলেছি dedicated hosting অনেক expensive. তাহলে হোস্টিং কেনার আগে এই কয়টা জিনিস অবশই নজরে রাখবেন।

হোস্টিং কেনার জন্য অবশ্যই যে সকল বিষয় গুল যানবেন?

হোস্টিং কেনার জন্য অবশ্যই যে সকল বিষয় গুল যানবেন?

একটা ওয়েব হোস্টিং কেনার সময় কোন কোন বিষয় গুল লক্ষ রেখে একটা সঠিক হোস্টিং সার্ভার থেকে আপনার সাইট এর জন্য হোস্টিং কিনবেন। নিচে স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা করা হলঃ

হোস্টিং কেনার বাজেট -

প্রত্যেকেরই একটা আনুমানিক বাজেট থাকে যার মধ্যে সে হোস্টিং কিনবে। একই সাথে ভাল মানের এবং কম টাকার মধ্যে কিনতে হলে অবশ্যই আপনাকে বাজার ঘুরে দেখতে হবে। আপনার বাজেট নির্ধারণ অবশ্যই বাস্তব সম্মত হতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে যেমন টাকা পে করবেন তেমন সার্ভিস পাবেন। আপনি যেমন ডিমের দামে মুরগী পাবেন না তেমনি হোস্টিং এর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। একটা ডেডিকেটেড সার্ভারের প্রাইস ১৫০-৫০০ ডলার প্রতি মাসে এখন আপনি যদি ৫০ জিবি স্পেস ২ ডলার মাসে চান তাহলে আপনাকে ডাউনটাইম, সাইট স্লো লোডিং এসব বিষয় সহ্য করতে হবে। তাই কেনার আগে এ বিষয়টি ভেবে দেখুন। সস্তার তিন অবস্থা এই কথাটি মাথায় রাখুন।

হোস্টিং ডিস্ক স্পেস -

আপনাকে স্পেস এর কথা চিন্তা করতে হবে। আপনার ওয়েব সাইটের জন্য কতটুকু স্পেস লাগবে তা হিসাব করে নিন। আপনি যদি ব্যক্তিগত ওয়েব সাইট করতে চান যাতে শুধু কয়েকটা পেজ থাকবে তাহলে ৫০ এমবি স্পেসই যথেষ্ট। আর যদি চিন্তা ব্যক্তিগত ব্লগ টাইপের ওয়েব সাইট হবে তাহলে ২০০-৫০০ এমবি স্পেসই যথেষ্ট। আর আপনি যদি চিন্তা করেন ছবি, গান, ভিডিও রাখবেনতবে আপনাকে বড় ওয়েব স্পেসের দিকে নজর দিতে হবে। অনেকেই দেখা যায় ১০০ এমবি হোস্টিং যথেষ্ট সাইট হোস্ট করার জন্য কিন্তু কিনে ফেলেন ১-৫০ জিবি। বছর বছর টাকা দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ব্যবহার করতেছেন ১০০ এমবি। তাই অযথা স্পেসের জন্য অতিরিক্ত টাকা না দিয়ে সবচেয়ে ছোট প্লান থেকে শুরু করুন। আপনার যদি স্পেস বেশি প্রয়োজন পড়ে তাহলে পরবর্তী প্লানে আপগ্রেড করে নিবেন। এবং প্রায় সব কোম্পানিই আপগ্রেড সুবিধা দিয়ে থাকে।

আনলিমিটেড স্পেসের ফাঁদে পা দিবেন না। এটা একটা মার্কেটিং ট্রিকস। কোন কোম্পানিরই আনলিমিটেড স্পেস দেয়া সম্ভব না। একবার চিন্তা করুন তো আপনি মার্কেটে আনলিমিটেড হার্ডডিস্ক দেখেছেন কি না। সার্ভারও আমাদের পিসির মতোই।

হোস্টিং ব্যান্ডউইথ -

প্রতিবার পাঠক / দর্শক যতগুলো পেজ আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করে, ততগুলো পেজ, ছবি, গান, ভিডিও অর্থাৎ ওইসব পেজে যা কিছু আছে সবগুলোই পাঠকের কম্পিউটারে ডাউনলোড হয়। প্রাথমিক অবস্থায় একটা সাইটের ১ জিবি ব্যান্ডউইথ ও যথেষ্ট। পারসোনাল সাইটের জন্য এর চেয়ে বেশি লাগার কথা না। আর আপনার সাইটে যদি প্রচুর ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি থাকে তাহলে প্রচুর ব্যান্ডউইথ লাগতে পারে। ১০-১০০ জিবি অথবা তারচেয়ে ও বেশি।

হোস্টিং - আপটাইম/SLA গ্যারান্টি -

একটি ওয়েবসাইটের জন্য আপটাইম বিষয়টি খুবই জরুরি। হোস্টের সার্ভার যতক্ষন সচল থাকবে, আপনার ওয়েবসাইটও ততক্ষন সক্রিয় থাকবে। এটা কেবলমাত্র পাঠকের জন্যই গুরুত্বর্পূণ নয়, বরং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনেও অনেক গুরুত্ববহন করে। পাঠক একবার আপনার ওয়েবসাইটে আসে দেখলো আপনার ওয়েবসাইট কাজ করছে না, তখন তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে এবং সে ভবিষ্যতে নাও আসতে পারে। ঠিক তেমনি সার্চ ইঞ্জিনের বট ইনডেক্সের সময় ওয়েবসাইট ডাউন থাকলে, সে ফিরে যাবে এবং আপনি আপনার ওয়েবসাইট ইনডেক্স হওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।এখন প্রতিটি হোস্টিং কোম্পানিই ৯৯.৯% টাইম সক্রিয় থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু এদের প্রকৃত আপটাইমের হিসেব পাওয়া সম্ভব নয়। তাই কেনার আগে গুগলে যে কোম্পানি থেকে কেনার কথা চিন্তা করছেন সে কোম্পানির নামের সাথে আপটাইম শব্দটি লাগিয়ে সার্চ দিন। যেমন- examplehost uptime লিখে সার্চ দিলে আপনি example.com এর আপটাইম সম্পর্কে জানতে পারবেন।আর কোম্পানি যদি কোন মাসে আপটাইম গ্যারান্টি রক্ষা না করতে পারে তাহলে সে জন্য ক্রেডিট প্রদান করে কি না চেক করে নিতে হবে। কোম্পানির ওয়েব সাইটে টার্মস অব সার্ভিসেস লিংকে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত লেখা থাকে।

হোস্টিং কেনার পরে মানিব্যাক গ্যারান্টি -

মানিব্যাক গ্যারান্টি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। অনেক কোম্পানিই ৩০ দিনের মানিব্যাক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন কোম্পানি মানিব্যাক গ্যারান্টি দিচ্ছে কিনা।

হোস্টিং কোম্পানি সামগ্রিক অবস্থা -

হোস্টিং কেনার আগে হোস্টিং কোম্পানি ভাল না মন্দ তা জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন। কোম্পানি সম্পর্কে ইউজারদের দৃষ্টি ভঙ্গি কেমন তা কোম্পানির রিভিউ দেখলেই বুঝতে পারবেন। যেমন- গুগলে গিয়ে linuxhostlab review লিখে সার্চ দিলে linuxhostlab সম্পর্কে ব্যবহারকারিদের মতামত জানতে পারবেন।
কোম্পানি যেসব বিলিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে তা বৈধ্য উপায়ে করে কি না। নাকি চোরাই সফটওয়্যার ব্যবহার করে তা নিশ্চিত হয়ে নিন। যারা চোরাই স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে সার্ভিস দেয় তাদের থেকে ভাল কিছু আশা করা ঠিক হবে না।

হোস্টিং কোম্পানির সাপোর্ট সেবা -

আজকের দুনিয়ায় সাপোর্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার সার্ভার যদি কখনো ডাউন হয় আর যদি তা জানাতে এবং উত্তর পেতে কয়েক দিন লেগে যায় তাহলে লক্ষ ভিজিটর হারাতে পারেন। আর যদি আপনি রিসেলার ক্লাইন্ট হোন তবে তো মহা বিপদে পড়বেন। আপনার ক্লাইন্টকে কোন উত্তর দেয়ার মতো কিছু থাকবে না। তাই কোম্পানির সাপোর্ট কত দ্রুত তা নিশ্চিত হয়ে নিন। হোস্টিং কোম্পানি জিজ্ঞাসা করুন তাদের গ্যারান্টেড সাপোর্ট রেসপন্স টাইম কেমন। এবং কি কি মাধ্যমে সাপোর্ট দিয়ে থাকে।

হোস্টিং ফিচার -

হোস্টিং প্লানগুলোর মধ্যে কোন লিমিটেশন থাকলে সেটা অনেক সময় ভালভাবে উল্লেখ করা থাকে না। তাই প্লানগুলোর তুলনা করে আপনার চাহিদার সাথে বেপারগুলো মিলে কিনা তা দেখে নিন। আপনি যদি এএসপি ডট নেটে সাইট বানাতে চান তাহলে আপনার উন্ডডোজ হোস্টিং লাগবে। লিনাক্স হোস্টিং এ চলবে না। আপনার যে যে ফিচার প্রয়োজন তা তারা দিতে পারছে কি না দেখে নিন।

হোস্টিং লিমিটেশন জেনে নেওয়া -

আপনি আপনার হোস্টিং এ কি কি হোস্ট করতে পারবেন এবং কতটুকু স্পেস, ব্যান্ডউইথ, সিপিউ ব্যবহার করতে পারবেন তা টার্মস অব সার্ভিসেস পেজে দেয়া থাকে। তাই কোম্পানির টার্মস অব সার্ভিসেস পড়ে নিতে হবে।

হোস্টিং কন্ট্রোল প্যানেল -

আপনার ওয়েব সাইট ম্যানেজ করার জন্য কন্ট্রোল প্যানেল প্রয়োজন। কন্ট্রোল প্যানেলের সাহায্যে আপনি আপনার ওয়েব সাইট সহজেই ম্যানেজ করতে পারেন। ওয়েব হোস্টিং এ সব চেয়ে সহজ এবং অধিক ফিচার সমৃদ্ধ কন্ট্রোল প্যানেল হচ্ছে সিপ্যানেল। তাই সবসময় সিপ্যানেল হোস্টিং নেয়ার কথা চিন্তা করুন।

হোস্টিং সার্ভার লোড -

সাভার ওভার লোড কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনি হোস্টিং কোম্পানিকে সার্ভারের টোটাল কোর এবং প্রসেসর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন। যদি সার্ভার কোর ৮টা হয় এবং তাদের সার্ভার লোড ৮ এর উপরে হয় তাহলে সার্ভার ওভারলোড। এবং ওভারলোড সার্ভারে সাইট হোস্ট করলে সাইট লোড হতে বেশি সময় নিবে।

হোস্টিং টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতা -

আপনি যদি ব্লগ, ই-কমার্স, লাইভ ভিডিও ইত্যাদি ধরণের সাইট বানাতে চান তাহলে সস্তার তিন অবস্থায় না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সস্তা প্যাকেজের সার্ভার গুলোর হার্ডওয়্যার কনফিগ খুব একটা ভাল হয় না। ফলে আপনার সাইট আধিকাংশ সময় ই আফলাইন/ডাউন থাকবে যা আপনার ও আপনার ভিজিটর কারো ই কাম্য নয়। তাই আপনি যে প্রতিষ্ঠানটিকে বাছাই করবেন তাদের থেকেই যেনে নিন আপনার জন্য কোনটি ভাল হবে। অযথা নিজের ভুলে হয়রানি হয়ে প্রতিষ্ঠানের বদনামি করবেন না

হোস্টিং বিশেষ সুবিধাদি সম্পর্কে -

এই কথাটাকে আরো সুন্দর ভাবে বলতে গেলে বলতে হবে “সুন্দরীতমা তোমার রুপের রহস্য কি?” অর্থাৎ কোন বৈশিষ্ঠের কারণে আপনার নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানটি আপনার কাছে সেরা? একাধিক ডাটাসেন্টার, দৈনিক ব্যাকাপ, ফ্রি ডোমেইন প্রইভেসি, আনলিমিটেড ব্যান্ডওয়াইড সেটা যাই হোক, আপনার যদি মনে হয় আপনার প্রয়োজনের সবটুকুই তারা দিতে পারবে তাহলে আপনি তাদের সেবা নিতে পারেন।

হোস্টিং ব্যবহারকারীদের টিউমেন্ট -

তাদের ব্লগ ও সোসাল মিডিয়া গুলো ভিজিট করলেই আপনি এই বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। তাছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন গুপে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর সম্পর্কে জানতে পারবেন।

হোস্টিং ই-মেইল সুবিধা -

এটি খুবই গুরুত্বপূণ একটি বিষয়। আপনি অবশ্যই এই বিষয়টির ব্যপারে আপনার পচ্ছন্দের প্রতিষ্ঠানটিকে জিজ্ঞাস করতে ভুল করবেন না। আপনার সাইটে যদি স্পার্ম জনিত সমস্যা হয় তাহলে বুঝতে হবে তারা এ ব্যপারে পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে ব্যর্থ। তাই আগে থেকেই জেনে নিন ই-মেইল সুবিধা ও স্পার্ম সমাধান সর্ম্পকে।

হোস্টিং কন্ট্রলপ্যানেল -

আপনি যদি ওয়েবের জগতে নতুন হয়ে থাকেন তারপরেও স্ক্রিপ ইনস্টল, ই-মেইল সেটআপ, FTP একাউন্ট সেটিং করতে হবে প্রভাইডরের সাহায্য ছাড়াই। এক্ষেত্রে cPanel অথবা Plesk এর ইন্টারফেস আপনার জন্য সুবিধা জনক। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি প্রভাইডর cPanel ব্যবহার করে থাকে সুতরাং আপনার এ ব্যপারে খুব একটা সমস্যা হবে না। এতো গেল হোস্টিং কন্ট্রোলপ্যানেল। ডোমেইন এর কন্ট্রোলপ্যানেল হোস্টিং কন্ট্রোলপ্যানেল থেকে আলাদা। আপনি ডোমেইন কেনার আগে অবশ্যই জেনে নিবেন আপনাকে ডোমেইন কন্ট্রোলপ্যানেল দেয়া হবে কিনা এবং ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন পড়ে ডোমেইন ট্রান্সফার করতে পারবেন কিনা।

শেষ কথা,

তাহলে বন্ধুরা, আশাকরি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সকল প্রশ্ন বা সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছি। যদি আপনাদের ওয়েব হোস্টিং নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট অবশই করবেন। এবং যদি আর্টিকেল ভালো লেগে থাকে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার অবশই করবেন। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন »

একটি মন্তব্য করতে প্রবেশ বা নিবন্ধন করতে হবে।

 

এই সম্পরকিত আরও »
০১, ফেব্রুয়ারী, ২০২০, ১:৪৩ পূর্বাহ্ণ - MD Rashidul Islam
০১, ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ - লতিফা বেগম
লেখক সম্পর্কে »

থেমে গেছি,কিন্তু হেরে যায়নি..!! আবার যদি চলা শুরু করি গন্তব্য পৌঁছানো পর্যন্ত কেউ থামাতে পারবেনা.....!!

জনপ্রিয় পোস্ট »
০৮, জুলাই, ২০১৯, ২:১০ অপরাহ্ণ - বিবিসি ফ্লাই
১৬, অক্টোবর, ২০১৯, ৩:০৪ পূর্বাহ্ণ - মেসিলা ইয়াসমিন
২৫, জুলাই, ২০১৯, ৬:২৩ অপরাহ্ণ - লতিফা বেগম
২৭, নভেম্বর, ২০১৯, ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ - ডাক্তার ফাহামিদা সাবিনা
সাম্প্রতিক লেখাসমূহ »
২২, আগস্ট, ২০২১, ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ - Aysha
১৪, আগস্ট, ২০২১, ৭:৫৮ অপরাহ্ণ - Aysha Biswas
২৩, জুলাই, ২০২১, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ - Akhi Akber
২৩, জুলাই, ২০২১, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ - Sidratul Momotha Rim